নওগাঁর রাণীনগরে হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানকে (৪৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা।রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জাহিদুর রহমান রাণীনগর উপজেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। এ নিয়ে গত দুই মাসে নওগাঁর সংসদীয় ৬নং আসনের আওতাধীন রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বিএনপির চার নেতাকর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটল।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে একের পর এক এসব হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশের নীরব ভূমিকায় ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ সকাল ১০টার দিকে জাহিদুর রহমান কার্যালয়ে এসে জনগণকে সেবা দিচ্ছিলেন। এ সময় আমিও কিছু কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি স্থানীয় এক ব্যক্তি তার বাবার মৃত্যুসনদ নেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ওই মুহূর্তে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তি কক্ষে ঢুকে মৃত্যুসনদ নিতে আসা সেবাপ্রত্যাশীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কাজ হয়নি?’ ওই লোক বলেন, ‘না কাজ হয়নি।’ তখন মাস্ক পরে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে আপনি একটু বাইরে যান। পরে আসেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কিছু পারসোনাল (ব্যক্তিগত) কথা আছে’। তার কথামতো মৃত্যুসনদ নিতে আসা ব্যক্তি বের হয়ে যান।

ইউপি সচিব আরও বলেন, তখন জাহিদুর রহমান আমাকে বলছিলেন ‘মনে হয় প্রশাসনের লোকজন। তাই হয়তো সেবাপ্রত্যাশীকে বাইরে যেতে বলছে’। তখন মাস্ক পরিহিত ওই লোক চেয়ারম্যানকে বলেন, ‘কি খবর। আপনার কাজকর্ম কেমন চলছে?’। উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এইতো চলছে ভালোই’। তখন বাইরে থেকে হেলমেট ও মাস্ক পরা আরও চারজন লোক পরিষদের ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রত্যেকের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। তারা এসে সেবাপ্রত্যাশীদের বলেন, ‘তোরা পরিষদে কি করতেছিস? বের হ.. বলতেছি বের হ’। তাদের মধ্যে একজন বড় ধারালো ছুরি নিয়ে চেয়ারম্যানকে আক্রমণে এগিয়ে গেলে আমি দৌড়ে চিৎকার করে বেরিয়ে আসি। আমাকেও ছুরি নিয়ে ধাওয়া করে মাস্ক ও হেলমেট পরিহিতরা। পরে রাস্তার দিকে পালিয়ে যাই।

তরিকুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনায় আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর পরিষদে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়া লোকজন মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যায়। হেলমেট ও মাস্ক পরে থাকায় তাদের কাউকে চেনা যায়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্যদের জানিয়ে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে দেখি পুরো শরীর রক্তাক্ত। দুর্বৃত্তরা চেয়ারম্যানের পিঠ, বুকসহ একাধিক জায়গায় কুপিয়ে জখম রয়েছে। তার ডান হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরে তাকে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে চার ঘণ্টা যাবত তার অপারেশন চলছে।

রাণীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হেলমেট ও মাস্ক পরা কয়েকজন ইউপি কার্যালয়ে ঢুকে চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানকে কুপিয়ে জখম করেছে। তার পিঠ ও ডান হাতের কবজিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মালিপুকুর বাজার এলাকায় বিএনপির কর্মী ও স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেন এবং একই দিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম এলাকায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর রাণীনগর উপজেলার বরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে।

নওগাঁ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দুই মাসে এক আসনের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির চারজন নেতাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে জখম করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীরা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্যই টার্গেট করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পারদর্শী হলেও বিএনপি নেতাদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্তে বরাবরই দুর্বল। এজন্যই পর পর চারটি ঘটনা ঘটল। অথচ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে রাণীনগর ও আত্রাই আবারও সর্বহারার জনপদে পরিণত হবে।

এ বিষয়ে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাউকে কুপিয়ে জখম করা খুবই মর্মান্তিক বিষয়। এটাকে রাজনৈতিক দিকে প্রবাহিত করা উচিত নয়। সর্বশেষ ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকেই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরমান হোসেন রুমন/এমজেইউ