বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিকদের পথিকৃৎ মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়ায় ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। 

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী বিষয়ে তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। কারবালার যুদ্ধকে উপজীব্য করে রচিত বিষাদ সিন্ধু তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম।

তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তেমন কোনো আয়োজন নেই। শুধু ফুলেল শ্রদ্ধায় নীরবেই শেষ হবে বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, দেশের চলমান অবস্থা ও একাডেমির বিভিন্ন নিয়োগ সংক্রান্ত কারণে মীর মশাররফ হোসেনের জন্মদিনটি উপলক্ষ্যে তার সমাধিস্থলে তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। তবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে তার সমাধিস্থলে প্রতিনিধি এসে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে যাবেন এবং বাংলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

জানা গেছে, কালজয়ী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের আজকের দিনে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলা লাহিনীপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী নবাব স্টেটে বসবাস করতেন। এখানেই তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে পদমদীতে তাকে সমাহিত করা হয়। এখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ২০০১ সালে এই স্মৃতিকেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্সটির যাত্রা শুরু। তবে বর্তমানে কমপ্লেক্সটির দেওয়ালে ধরেছে ফাঙ্গাস। চারপাশে জমেছে ময়লা। জন্মদিন এলেই পরিষ্কারের তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চৌধুরী রফিকুন নবী টিটো বলেন, মীর মশাররফ হোসেন আমাদের বালিয়াকান্দি তথা রাজবাড়ী জেলার গর্ব। তার জন্মদিনটি প্রতি বছরই নামমাত্র অনুষ্ঠান মালার মাধ্যমে শেষ হয়। তবে এবার তারা সেই অনুষ্ঠানটিও বাতিল করেছে। যেটা সত্যিই দুঃখজনক।

বালিয়াকান্দি মীর মশারফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মুন্সী আমীর আলী বলেন, এখানে মূলত সমন্বয় করা খুবই প্রয়োজন। মীরের জন্মবার্ষিকীতে জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউএনও ও মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ নিয়ে সমন্বয় করতে পারলে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দারুণভাবে দিনটি উদ্‌যাপন করা সম্ভব। এছাড়া মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কমপ্লেক্সে মানুষকে যেতে উৎসাহিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজবাড়ীতে মীর মোশাররফ হোসেন এর নামে একটি সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এবং মীর মোশারফ হোসেন রচনা সমগ্র বাংলা একাডেমি কর্তৃক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা হোক। 

বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও পরিকল্পনা বিভাগ) ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রটি নিয়ে তাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছেন। সেটি খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। স্বল্প পরিসরে হলেও তারা এটিকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রেখেছেন বলেও তিনি দাবি করেন।

মীর সামসুজ্জামান/এএএ