ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ভারী বৃষ্টি ঝড়িয়ে দুর্বল হয়ে পড়লেও বরিশাল বিভাগে এর প্রভাব এখনো কাটেনি। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর জানা গেছে। তাছাড়া টানা ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময় অবিরাম বৃষ্টি ঝড়ছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

বিভাগের কোথাও প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন স্থানে গাছ উপরে পড়া, উপকূলে কিছু বসতবাড়ির ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের।

ঝালকাঠির বিনয়কাঠি এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, আমন ধানের ভালো ফলন হলেও মিধিলির বৃষ্টিতে ক্ষেতের ধান শোয়ায়ে ফেলেছে। অগ্রহায়ণের শেষে ধান উঠতে শুরু করতো। এখন যে অবস্থায় রয়েছে তাতে ধানগাছ পানিতে শুয়ে পড়লে চিটা হবে। আমার এক বছরের পরিশ্রম সব পানিতে শোয়ায়ে দিয়ে গেল।

বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের কৃষক রুস্তম আলী বলেন, ক্ষেতের পঞ্চাশ শতাংশ ধান চিটা হয়ে যাবে। এই বৃষ্টি আমাদের সকলের জন্য খারাপ খবর নিয়ে এসেছে। ক্ষেত থেকে কীভাবে পানি নামাবো তা জানি না।

মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলার মেঘনা তীরের ধানক্ষেত তলিয়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামের সোলায়মান জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ ছিল না। এখন পৌর শহরে বিদ্যুৎ এলেও গ্রামের লাইনগুলোতে বিদ্যুৎ আসেনি। অনেকের মোবাইলে চার্জ নেই। 

বরগুনা পৌর শহরে বিদ্যুৎ থাকলেও উপজেলাগুলোতে নেই। একই অবস্থা ভোলায় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি সুলতান মাহমুদ জানান, দিনভর বৃষ্টিতে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই সামান্য। তবে সন্ধ্যার আগে বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসায় যাত্রী বেড়েছে। নগরী ও আশপাশের এলাকায় খুবই কম সংখ্যক ক্ষুদ্র পরিবহন (থ্রি-হুইলার) চলাচল করেছে।

ইব্রাহিম নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, ঝড়ের পূর্বাভাস জেনে সাধারণ মানুষ বের হয়নি। তবে অতি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তাদের যাত্রী হিসেবে পেয়েছি।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়ায় লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আশা করা যাচ্ছে আগামীকাল শনিবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে নৌযান চলাচল করবে।

আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৭৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এত বেশি বৃষ্টি এই মৌসুমে আর হয়নি। ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্রমেই এর প্রভাব কেটে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী বরিশালের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুরাদুল হাসান জানান, এখনো বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিভাগের ৬ জেলা থেকেই খবর আসছে বিভিন্ন স্থানে ধানগাছ নুয়ে পড়েছে, পানিতে ডুবে গেছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অনুমান করা এখনই সম্ভব না। ক্ষতির পরিসংখ্যান জানতে দুই-তিনদিন লাগবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে আগ্রহায়ণের শুরুতে প্রবল বৃষ্টিপাতে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়বে কৃষক। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর