খুলনা বিভাগীয় চাকরি মেলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ৩৫ জন চাকরি পেয়েছেন। কোনো লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তারা।
 
জানা যায়, মেলায় এসে চাকরির জন্য তাদের লাগেনি ব্যাংক ড্রাফট, করতে হয়নি লিখিত আবেদন। এমনকি লিখিত পরীক্ষার ঝামেলাও ছিল না। কয়েক মিনিটের ভাইভায় সোনার হরিণ চাকরি পেয়ে তারা খুব আনন্দিত।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে দিনব্যাপী এ চাকরি মেলার আয়োজন করে নাগরিক উদ্যোগ। মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম।

ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক খান মোতাহার হোসেন, বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থা সুশীলনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা নুরুজ্জামান, জবঘর ২৪ ডট কম এর প্রধান নির্বাহী অদ্রিস দিপংকর ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোজেক্টের ম্যানেজার মাহেনুর আলম চৌধুরী।

মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয় জোট’ খুলনার সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো দলিত, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। জনগোষ্ঠীগুলো তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মানসম্মত শিক্ষা থেকে শুরু করে একটি সম্মানজনক পেশা ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হন। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অনগ্রসরতার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা। চাকরি মেলার মাধ্যমে আশা করি পিছিয়ে থাকা এসব জনগোষ্ঠীর শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।

মেলা প্রসঙ্গে আয়োজক সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল ইসতিয়াক মাহমুদ বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক চর্চা লাঘব এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড এর সহায়তায় নাগরিক উদ্যোগ, ব্লাস্ট, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন ২০২১ সাল থেকে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ’ শিরোনামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সঙ্গে এডভোকেসির মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলেও প্রশিক্ষণ শেষে তারা প্রয়োজনীয় অর্থ এবং সুযোগের অভাবে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বা কোনো মর্যাদাপূর্ণ পেশায় যেতে পারছে না। সুতরাং মর্যাদাপূর্ণ পেশায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয় জোট’ বিভাগীয় পর্যায়ে চেম্বার অব কমার্স ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত এডভোকেসি করে চলেছে। ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয় জোট’-এর নেতৃত্বে খুলনায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবকদের জন্য দিনব্যাপী এ চাকরি-মেলা আয়োজন করা হয়েছে।

চাকরি মেলায় স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের চাকরিদাতা ১৩টি ব্যবসায়ী এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রায় ১০০ এর অধিক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া মেলায় বিভাগীয় কাউকে বাদ দিয়ে নয় জোটের সদস্যরা, প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও) এর সদস্যরা, ভলান্টিয়ার, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নেতারা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণরাও অংশগ্রহণ করেন।

রয়্যাল মেশিনারি কর্পোরেশন লিমিটেড স্টলের ম্যানেজার ওহিদ খান বলেন, এ ধরণের মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখানে এসে আমরা আমাদের আধুনিক মেশিনারীজের সঅঙ্গে মেলায় আগতদের পরিচিত করাতে পারছি। মেলায় যারা চাকরি প্রত্যাশার জন্য আসছেন তাদের জন্য আমরা কিছু করার চেষ্টা করব। আগামীতেও আমাদের প্রতিষ্ঠান এ ধরণের মেলায় অংশগ্রহণ করবে। 

বিকেলে চাকরি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুসেইন খাঁন। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মোস্তাক উদ্দীন, খুলনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক খান মোতাহার হোসেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর খুলনা উপপরিচালক হাসনা হেনা, খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আনজুম নাহিদ চৌধুরী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে আয়োজক সংস্থা নাগরিক উদ্যোগের পক্ষে প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল ইসতিয়াক মাহমুদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

মোহাম্মদ মিলন/আরকে