বরিশাল-৫ আসন
সরে দাঁড়ালেন নানক, নৌকা চান সাদিক আব্দুল্লাহ ও ফারুক
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির পরপরই বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে বরিশাল-৫ (সদর) আসনটি। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিতে দীর্ঘদিন ধরেই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে আসছিল।
মেয়র পদে টিকেট হারানোর পর সমালোচনা হজম করে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনার কথা আগেই জানান দিয়েছিল সাদিকের ঘনিষ্ঠরা। বিপরীতে আসন ধরে রাখতে প্রস্তুতিও ছিল পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু এর মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বরিশাল সদর আসনে নৌকার টিকেট চেয়ে ফরম সংগ্রহ করলে সাদিক ও জাহিদ শিবির বিমর্ষ হয়ে পড়ে। দুই পক্ষই নিশ্চিত ছিলেন বরিশাল সদর আসন হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার।
তবে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সেই ধোঁয়াশা কেটে যায়। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির বরিশাল বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলরাম পোদ্দার জানান, জাহাঙ্গীর কবির নানক বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেননি। তিনি ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
জাহাঙ্গীর কবির নানকের এমন সিদ্ধান্তের পর আবারও বরিশালের স্নায়ুযুদ্ধ পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে গেছে সাদিক ও জাহিদ শিবিরে।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে আমি আশাবাদী সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পাবেন। তৃণমূল থেকেই সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে সমর্থন দিয়েছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে এসে সাদিক আব্দুল্লাহর সর্বাত্মক সহায়তায় বিপুল ভোটে জয়ী হন জাহিদ ফারুক। এমপি হওয়ার পরে তিনি সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেই ভিন্ন বলয় গড়ে তোলেন। এমনকি সিটি নির্বাচনে সাদিক আব্দুল্লাহ যেন মনোনয়ন না পান সেজন্য কাজ করেন। এবার আমরাও সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে মাঠে রয়েছি। বিকল্প প্রার্থীও রাখা হয়েছে।
এই আসনে নৌকার টিকেট পেতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। এ ছাড়া সাদিকের অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, সালাউদ্দিন রিপন, মোহাম্মদ আরিফ হোসেন আরিফিন মোল্লা, মশিউর রহমান খান ও মোর্শেদা বেগম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
নেতাকর্মীরা বলছেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম যেন মনোনয়ন না পান সেজন্য নিজে এবং অনুসারীদের দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করিয়েছেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী যেন মনোনয়ন না পান সেজন্য বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করতে পারেন। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অত্যন্ত সৎ ও জনবান্ধব। আমাদের বিশ্বাস তার কাজের মূল্যায়নে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। এর বাইরে যারা যত ষড়যন্ত্রই করুক তা বৃথা যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন। ফলে নির্বাচনে তাদের দল থেকে অনেকের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা বাড়বে এটিই স্বাভাবিক। দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ সঠিকভাবে থাকলে এটা কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতি উদাসীন হয়ে থাকে। নির্বাচনে সব দল গ্রহণযোগ্যতা ও গণতন্ত্র চর্চায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রির চার দিনে বরিশাল বিভাগের ২১ আসনের বিপরীতে ২৫৮ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ৫৫ জন।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ