এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে দেওয়া রোল নম্বরটি খাতায় লিখেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ফলাফল আনতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন তাদের প্রবেশপত্র ও রোল নম্বরটি বদলে গেছে। নতুন প্রবেশপত্র অনুযায়ী ফলাফল নিতে হয়েছে তাদের। ফলাফলের আগ মুহূর্তে প্রবেশপত্র বদলের এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে। অন্তত ৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রে এমন পরিবর্তন করা হয়েছে।  

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ অসৎ উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ড বলছে, প্রযুক্তির ত্রুটির কারণে একই রোল নম্বর দু’জনের এসেছিল। আর এটি ফলাফল তৈরির আগ মুহূর্তে ধরা পড়ে। তাই সমন্বয় করতে গিয়ে নতুন রোল নম্বরে  ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৫৬ জন শিক্ষার্থী। এর মাঝে মাত্র ১৬ জন কৃতকার্য হয়েছেন। মানবিক শাখায় অংশ গ্রহণকারী মোছা. কাকন আক্তার ৪০৮৭২৪ ও ইসরাত জাহান জেরিন ৪০৮৭২৩ রোল নম্বরে পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। দু’জনেই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন। শিক্ষার্থী কাকন আক্তার তার রোল নাম্বারে অনলাইনে অনুসন্ধান করে দেখেন, নিজের নামের পরিবর্তে সুসং দূর্গাপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাজাহরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে। একই ঘটনা ঘটেছে ওই কলেজের ইসরাত জাহান জেরিনসহ ৫১ জন শিক্ষার্থীর। ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ কয়েকটি কলেজই এমন ঘটনা ঘটেছে।

ভালুকা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজ উদ্দিন সুমন বলেন, এমন ঘটনা আমি আগে কখনো শুনিনি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এখন আমাদেরকে দায়ী করছে। অথচ এ সব বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।

মর্নিং সান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান জুয়েল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে এ বছর ৮১৫ জন পরীক্ষা দিয়েছে। তার মাঝে ৩০-৩৫ জনের এমন সমস্যা হয়েছে। 

বাটাজোর সোনার বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সচিব ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আজিজ জানান, বোর্ডের কারিগরি ত্রুটির জন্য কিছু সংখ্যক এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রোল বিভ্রাট দেখা দেয়। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রায় দেড়মাস পূর্বে যেসকল পরীক্ষার্থীর রোল নাম্বার পরিবর্তন হয়েছে, তাদের নামে সংশোধিত রোল নাম্বারসহ নতুন প্রবেশপত্র ইস্যু করে। ওইসব প্রবেশপত্রসহ চিঠির মাধ্যমে ও সরাসরি বিষয়টি আমাদের প্রত্যেক কেন্দ্র সচিবকে অবহিত করেছেন। আমরাও আমাদের কেন্দ্রের আওতাধীন কলেজসমূহের প্রধানদের এনে বিষয়টি অবহিতসহ ওই সব প্রবেশ পত্র হস্তান্তর করেছি।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বোর্ডের অধীনে চারটি জেলায় ২৮৬টি কলেজের ৭৫ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মোট পাস করেছেন ৫৩ হাজার ৪২৬ জন। মানবিক বিভাগের পাস করেছে ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করছেন, পরীক্ষার ফলাফল আনতে গিয়ে জানতে পারেন তাদের রোল নম্বর পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে ভালো পরীক্ষা দিলেও তাদের ফেল দেখানো হয়েছে। 

তবে শিক্ষা বোর্ড বলছে, নিজস্ব জনবল না থাকায় এই শিক্ষা বোর্ডের প্রোগ্রামিংয়ের কাজ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও যশোর শিক্ষা বোর্ড। ফলাফল প্রকাশের আগ মুহূর্তে তথ্য আসতে শুরু করলে ধরা পরে জটিলতা। দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর ডুপ্লিকেশন হয়েছে। একই রোল নম্বর দু’জন শিক্ষার্থীর বেলায় হয়েছে। কারিগরি জটিলতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে দাবি করা হয় বোর্ডের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ম্যানুয়ালি বিষয়টি সামাধানে কাজ করা হয়। রেজিস্টশেন নম্বর ও খাতার সঙ্গে মিল করে পুরোনো রোল নম্বরের শুরুতে নতুন একটি সংখ্যা যুক্ত করে নতুন করে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। ফলাফল প্রকাশের ১৫ দিন আগে নতুন প্রবেশপত্র পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নতুন প্রবেশপত্রের রোল নম্বর অনুযায়ীই শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল পায়। ফলাফল নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকে অভিযোগ দিলে তাদেরকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হচ্ছে।

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. সামছুল ইসলাম বলেন, বোর্ডে আট হাজারের মতো শিক্ষার্থীর রোল নম্বর ডুপ্লিকেশন হয়েছে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। পরে সুক্ষ্মভাবে বিষয়টি তদারকি করে নতুন রোল নম্বর দিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। রোল নম্বর পরিবর্তনের সঙ্গে ফলাফলের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলাফল সঠিক রয়েছে।

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. গাজী হাসান কামাল বলেন, নিজস্ব জনবল না থাকায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। প্রবেশপত্র পরিবর্তনের কারণে অকৃতকার্য হয়েছে এটি অমূলক। মফস্বলের কলেজগুলোতে শিক্ষার মানের কারণে অনেকে অকৃতকার্য হয়েছে। শহরের কলেজগুলোতে রোল নম্বর পরিবর্তন হলেও সেখানে পাসের হার অনেক ভালো।

তিনি আরও বলেন, রেজাল্ট প্রস্তুত করা হয় রেজিস্টেশন নম্বর দিয়ে। রেজাল্টের জন্য রোল নম্বর প্রয়োজন নেই। যেগুলোতে সমস্যা হয়েছে সেগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছে। সংশোধন করে একমাস আগেই প্রবেশপত্র সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ফলাফল প্রস্তুত হয় এক সপ্তাহ আগে। রোল নম্বর পরিবর্তন হলেও রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন হয়নি।

আরকে