বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয় ভারতীয় তরুণী রিয়া বালার। বিয়ের মাস খানেক পর স্বামী দেশে ফিরে বন্ধ করে দেন যোগাযোগ। উপায় না দেখে ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্বামীকে খুঁজতে আসেন তিনি। তবে স্বামীকে না পেয়ে এক বুক বেদনা নিয়ে ফিরে গেছেন এ ভারতীয় তরুণী।  

শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন হয়ে হতাশা নিয়েই দেশে ফিরে যান তিনি। রিয়া বালা ভারতের বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনা এলাকার শ্যামল কান্তি বালার মেয়ে।

জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমু’র মাধ্যমে রিয়া বালার সম্পর্ক হয় বাংলাদেশি তরুণ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দেবনগর ইউনিয়নের শিবচন্ডী এলাকার অখিল চন্দ্র রায়ের ছেলে বিটু রায়ের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার শিকারপুর এলাকায় পিসির বাড়িতে রিয়া বালাকে বিয়ে করেন বিটু রায়। বিয়ের পর এক মাস ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা। তারপর বিটু দেশে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

স্বামী বিটু রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট-ভিসা করে গত ২৯ ডিসেম্বর ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন হয়ে স্বামীর বাড়িতে যান ভারতীয় তরুণী রিয়া বালা। কিন্তু তার আসার খবর পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান স্বামী বিটু রায়। তিনদিন শ্বশুর বাড়িতে থাকার পর স্বামীকে না পেয়ে নিরাপত্তার শঙ্কায় ভোগেন তিনি। পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান আলীকে বিষয়টি জানালে চেয়ারম্যান ঘটনাটি ইউএনও ফজলে রাব্বিকে জানান। ঘটনার জানার পর ইউএনও নারী ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় দ্রুত সেখান থেকে তরুণীকে নিয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার নারী-শিশু সেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ওই সময় বিটুর বাবা অখিল চন্দ্রও উপস্থিত ছিলেন।

রিয়া বালা বলেন, এখানকার প্রশাসন খুবই ভালো। আমি কলকাতাতেই থাকি। মাস্টার্স করেছি। ইমুর মাধ্যমে তার (বিটু রায়) সঙ্গে আমার পরিচয় তারপর আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমি তাকেই চাই, তাকে নিয়ে সংসার করতে চাই। এখন তাকে না পেয়ে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। আমাকে শূন্য হাতেই একবুক কষ্ট নিয়ে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।

দেবনগর ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ওই তরুণী আমাকে ফোনে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানালে আমি ইউএনওকে বিষয়টি জানাই। পরে ইউএনওর মাধ্যমে তাকে রাতে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় নারী ও শিশু সেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ছেলেটি পলাতক থাকায় তার পরিবারের কাছে মেয়েটিকে দেওয়া সম্ভব হয়নি বিধায় তাকে দুপুরে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে সে দেশে ফিরে যায়। আশা করছি ছেলের পরিবার তাকে ভারতে গিয়ে নিয়ে আসবে। ছেলেটির বাবা এমনই কথা দিয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া বলেন, যদিও মেয়েটির জন্য বিষয়টি অত্যন্ত কষ্টের। কিন্তু ছেলেটি পালিয়ে থাকায় বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তবে ছেলের বাবা ছেলে ফিরে এলে তাকে নিয়ে ভারতের যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে প্রশাসনিকভাবে ওই ভারতীয় তরুণী দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে গিয়ে তার বোনের কাছে তাকে তুলে দিয়েছি ।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, শুক্রবার নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তাকে থানায় নিরাপত্তার জন্য আনা হয়। তার স্বামী বিটু রায় পলাতক থাকায় তাকে প্রশাসনের সহযোগিতায় ইমিগ্রেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি সংবাদমাধ্যমকে কলেন, ভারতীয় ওই তরুণী মোবাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি সমাধানে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তবে অভিযুক্ত ওই যুবক পলাতক থাকায় বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হয়নি। ছেলের পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ছেলেকে খুঁজে বের করার। যেহেতু ওই তরুণী ভারতের নাগরিক, তাই তার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে তাকে তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এসকে দোয়েল/আরকে