মোছা. আলেয়া বেগম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ৮৪ হাজার ২১২ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন। তবে এবার তিনি মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের দিনেই বাদ পড়েছেন।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রিটার্নিং অফিসার ও জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পাঁচজন ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক না থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। একই সঙ্গে ওই দিন আরো দুজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন তিনি।

এদিকে মোছা. আলেয়া বেগমকে তার ওই পাঁচজন ভোটার উপস্থিত কার জন্য বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দিয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছিল। তবে তিনি ওই সময়ে ভোটারদের হাজির না করাসহ নিজেও হাজির না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। 

তিনি ছাড়া মনোনয়ন বাতিল হওয়া অন্য দুজন হলেন- জয়পুরহাট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রানী রাবেয়া আসরী ও জয়পুরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতোয়ার রহমান মন্ডল। 

রানী রাবেয়া আসরীর পাঁচজন ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক ছিল না। আর আতোয়ার রহমানের একজন ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক না থাকাসহ প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী উপস্থিত না থাকার অভিযোগ ছিল। তবে তাকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দেওয়ার পরও তিনি তাদের উপস্থিত করতে পারেননি।

জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি) আসনে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মোছা. আলেয়া বেগম। তিনি ডাব প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তিনি মোট ৮৪ হাজার ২১২ ভোট পেয়েছিলেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম দুদু নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৮২৫ ভোট। ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৩ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে আলেয়া বেগমই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।

কেননা সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোক্তাদির তিতাস পেয়েছিলেন ১ হাজার ৮২৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলন থেকে হাতপাখা প্রতীকে জহুরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৪ হাজার ২৪৬ ভোট এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের প্রার্থী মো. ওয়াজেদ পারভেজ মই প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫০৭ ভোট।

এদিকে ওই পাঁচজন ভোটারের স্বাক্ষর সঠিক ছিল দাবি করে মোছা. আলেয়া বেগম বলেন, আমি ৪ হাজার ৪৩৯ জন ভোটারের স্বাক্ষর নিয়ে দিয়েছিলাম। আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই বিকেলে যেতে পারলাম না। আর ওই পাঁচজন আমার আশেপাশের। কিন্তু তারা মাঠে কাজে যায়, আসে সন্ধ্যার দিকে। নির্বাচন অফিস থেকে একটা চিঠি দিবে। ওই চিঠি পাওয়ার পর আপিল করবো কিনা তা নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেব।

মনোনয়ন বাতিল হওয়া রানী রাবেয়া আসরী বলেন, সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার ভোটারের স্বাক্ষর। অনেকের মোবাইল নম্বরও দিয়েছি। এখন কি করবো? এটা নিয়ে আপিল বা অন্য কিছু করবো না।

মনোনয়ন বাতিল হওয়া আরেক প্রার্থী আতোয়ার রহমান মন্ডল বলেন, আমার একজন ভোটার ও প্রস্তাবকারী এবং সমর্থনকারীকে দেখতে চান। এক ঘণ্টার ভেতর তাদের আনতে বলা হয়। আমি তাদের সাড়ে ৩টার পর নিয়ে আসি। এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আনতে পারিনি। তাই আমার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তা আপিল করতে বলেছেন। আমি আপিল করবো।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোববার জয়পুরহাট জেলার দুটি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এই দুটি আসনে ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে ১৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

চম্পক কুমার/এমএসএ