‘আমার খুব শখ জনপ্রতিনিধি হওয়ার। এলাকায়ও ভালো সাড়া ছিল। আমার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় মানুষ খুব মুনে (মনে) আঘাত পেলো। নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ আছে। ইনশাআল্লাহ সেই সময়ের মধ্যে কাগজপত্র প্রস্তুত করে জমা দেব।’

এভাবেই ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া ইসরাফিল বিশ্বাস (৬০)। রোববার (৩ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।

ইসরাফিল জনপ্রতিনিধি হওয়ার লক্ষ্যে ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার বাবা রইমুদ্দিন বিশ্বাস স্বাধীনতা-পরবর্তী টানা ১৯ বছর ইউপি সদস্য ছিলেন। বাবাকে সবাই ভালোবেসে ভোট দিত। বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে বারবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সংসদ সদস্য পদে এর আগে ২০০৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিই। পরে আর নির্বাচন করা হয়নি। নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করতে চাই।

যতদিন না জিতবেন, ততদিন নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানান ইসরাফিল বিশ্বাস।

জানা গেছে, দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েও ক্ষান্ত হননি ইসরাফিল বিশ্বাস। তিনি বাজার কমিটির নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচন পর্যায়েও অংশ নিয়েছেন। বাদ পড়েনি পৌর কমিশনার, মেয়র, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও।

১৯৯৬ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আটবার জামানত হারিয়েছেন ইসরাফিল। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ তিনি। একসময়ের টিউবওয়েল মিস্ত্রি ইসরাফিল বর্তমানে ‘ঈশা’ নামে ডেকোরেটরের ব্যবসা করেন। বাঘা বাসস্ট্যান্ডে তার ডেকোরেটরের দোকান রয়েছে। তবে বারবার নির্বাচন করতে গিয়ে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। তবে এরপরও হাল ছাড়েননি তিনি। ইসরাফিলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত।

প্রসঙ্গত, রাজশাহী-৬ আসনে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে দুইজনের মনোনয়ন অবৈধ ও সাতজনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহরিয়ার আলম, জুলফিকার মান্নান জামী, মহসীন আলী, রাহেনুল হক, রিপন আলী, সামসুদ্দীন রিন্টু ও আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া ইসরাফিল বিশ্বাস ছাড়াও খাইরুল ইসলামের মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

শাহিনুল আশিক/এমজেইউ