যথাযথ নিয়মে হলফনামা পূরণ করতে না পারায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিরো আলম।

গত ৩ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। সেখানে যথাযথ নিয়মে হলফনামা পূরণ করতে না পারায় হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। এতে ফের আলোচনায় আসে হিরো আলমের নাম। 

তবে আপিলের প্রস্তুতি ছাপিয়ে মনোনয়ন বাছাইয়ের দিনে হিরো আলমের হাতের ঘড়ি নজর কেড়েছে সবার। ৩ ডিসেম্বর সকালে মেরুন রঙের ব্লেজারে পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন তিনি। আর হাতে ছিল সোনালী রঙের একটি ঘড়ি। ঘড়িটি স্বর্ণের নাকি সোনালী রঙের? এমন প্রশ্ন উঠেছে। 

কারণ নির্বাচনে অংশে নেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরাভ খানের কাছে গিয়েছিলেন হিরো আলম। সেখানে এবার উপস্থিত ছিলেন বলিউডের আলোচিত-সমালোচিত অভিনেত্রী রাখি সাওয়ান্ত। 

হিরো আলম ও রাখিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণাও দেওয়া হয়। নামও ঠিক করেন তারা ‘গ্যাংস্টার’। হিরো আলমের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- দুবাইয়ের ওই সফরের আগে তার হাতে ওই রকম ঘড়ি ছিল না। গুঞ্জন রয়েছে আরাভ খান এই সফরে রাখি সাওয়ান্তকে একটি সোনার নকশাখচিত মোবাইল উপহার দিয়েছেন। হিরো আলমও জানিয়েছেন, আরাভের কাছ থেকে একটি সোনার মোবাইল উপহার পেয়েছেন রাখি।

কিন্তু শুধু রাখিই কি উপহার পেয়েছেন? হিরো আলম কোনো উপহার পাননি? দেশে ফেরার পর মনোনয়ন বাছাইয়ের দিন হিরো আলমের হাতের ঘড়ি দেখে নতুন করে সেই প্রশ্ন ঘুরে-ফিরে আসছে।

নির্বাচন কমিশনে আপিল করার জন্য হিরো আলম বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, দুবাইয়ে যাওয়ার পর আমাকে একজন এই ঘড়ি গিফট করেছে। তবে সেটা আরাভ খান নয়। আর এটা কোনো স্বর্ণের ঘড়ি না। সোনালী রঙের। একেবারে সাধারণ ব্র্যান্ডের। রাখিকে স্বর্ণের মোবাইল দিয়েছেন আরাভ খান। আমাকেও একটি মোবাইল দিয়েছেন আরাভ।

তবে ঘড়ি কে উপহার দিয়েছেন তার নাম প্রকাশ করেননি হিরো আলম। আলোচিত এই ইউটিউবার বলেন, ‘ভাই আমি মিথ্যা কথা বলি না। মোবাইল পেয়েছি। মোবাইলটা স্বর্ণের বলা যাবে না। তবে মোবাইলের বডির ডিজাইনে স্বর্ণ দেওয়া। এটা কোনো কারণে পড়ে গেলে ভেঙে যাবে। এ জন্য সাথে নিয়ে বেড়াই না।’

কিন্তু হিরো আলমের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আরাভ খানের কাছে থেকে ঘড়ি-মোবাইল দুটোই পেয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিস সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিস লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম।

এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া- ৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন হিরো আলম। যদিও পরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

চলতি বছর বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনেও অংশ নেন হিরো আলম। বাছাইকালে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। পরে হাইকোর্ট থেকে প্রার্থিতার বৈধতা এনে নির্বাচন করেন। কিন্তু দুটি আসনেই পরাজয় হয় হিরো আলমের।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জমা দেওয়া হিরো আলমের হলফনামায় দেখা যায়, তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। যেখানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বগুড়া-৪ ও ৬ আসনের উপনির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় ব্যবসার আয় ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

এবারের হলফনামাতেও কৃষিজমি থেকে আয় দেখানো হয় ৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। আছে ৫৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র। এ হিসাবে গত ১১ মাসে মিডিয়া ব্যবসা থেকে তার আয় বেড়েছে ২২ হাজার টাকা।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরএআর