নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন না করে তাদের নিজের পায়ে নিজেরা কুড়াল মেরেছে।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার নিজ কক্ষে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

এ সময় কাদের মির্জা বলেন, সরকার পতনের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন।   আজকে নির্বাচন বানচালের নামে সারাদেশে যে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করা হচ্ছে ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত এর থেকেও জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, তখন আমাদের এই কোম্পানীগঞ্জেও অনেক গুপ্ত হামলা করেছে, আমাদের মামুন ও ইমাম হোসেনকে হত্যা করেছে, রাস্তাঘাট কেটেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে, সরকারি অফিস পুড়িয়েছে কিন্তু নির্বাচন বন্ধ করতে পারেনি। তারা আজকে আবারও গাড়ি পুড়াচ্ছে, ট্রাকে ঘুমন্ত হেলপারকে পুড়িয়ে মারছে, যাত্রীবাহী গাড়িতে টাইম বোমা দিচ্ছে। আসলে তারা কিছুই করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচনকে দল বৈধতা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহিষ্কার করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এছাড়া তারা যেন জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সক্ষতা রাখতে না পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও নজরদারী রাখা প্রয়োজন আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মনোনয়ন বঞ্ছিত, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভিন্নভাবে বিএনপি-জামায়াতকে উস্কানি দিচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাধে ভর করে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ভোটের দিন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।

কাদের মির্জা বলেন, আমি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানাব, যদি পুলিশ প্রশাসন একটি নিয়মের মধ্যে এনে দেয় যে, দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলের সময় ৮/১০টা গাড়ি এক সঙ্গে রওনা হবে আর অগ্নিসন্ত্রাসদের প্রতিহত করার জন্য গাড়িতে কিছু সরঞ্জাম রেখে সন্ত্রাস প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকবে তাহলে গাড়ি পোড়ানো বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী যদি অফিসে বসে না থেকে, অফিসের সামনে স্লোগান না দিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়, যেখানে গাড়িতে হামলার শঙ্কা থাকে সেখানে অবস্থান রাখে সেক্ষেত্রে এই আগুন সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব হবে।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলনের কবর রচিত হয়েছে উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি যে একতরফা নির্বাচন করেছে, সে নির্বাচনে আমাদের কোম্পানীগঞ্জে একটি কেন্দ্রেও ভোট হয়নি। উপজেলায় এনে ২০০০ ভোট ব্যালট বক্স দিয়ে কর্নেল এনামুল হককে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই নির্বাচন করে ৩ মাসও টিকতে পারেনি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আন্দোলনের দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। জন বিচ্ছিন্ন বিএনপি-জামায়াত কখনো আন্দোলনে সফল হবে না। তার প্রমাণ ২৮ অক্টোবর, সেদিন সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ঢাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পুলিশ হত্যা করে, আগুন সন্ত্রাস করে, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেও তারা দাঁড়াতে পারেনি সেদিনই তাদের আন্দোলনের কবর রচিত হয়েছে। 

কাদের মির্জা আরও বলেন, দেশে নির্বাচনী একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত কিছুই করতে পারবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচন হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনুমোদিত ৫৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এই অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে নাকি করেনি তা নিয়ে জনমনে কোনো উদ্বেগ নেই, জনগণ পাত্তাই দিচ্ছে না।

কোম্পানীগঞ্জে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে উল্লেখ করে কাদের মির্জা বলেন, আজকে কোম্পানীগঞ্জে আমরা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেইনি এমনকি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা রাস্তায়ও নামতে পারেনি।

ইনশাহআল্লাহ আমাদের প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। জনগণ জননেতা ওবায়দুল কাদের সাহেবকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন। তারা আগামী ৭ জানুয়ারি ব্যালটের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের সাহেবের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করবেন। তাছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ আমরা প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ৬০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিত করাব।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে কাদের মির্জা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ করব, আপনি বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে কিছু কিছু পাড়া আছে সেগুলোর দিকে নজর দিন। ইনশাআল্লাহ আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করবে।

কাদের মির্জা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নেবে। সে পদক্ষেপ প্রার্থীরা মাথা পেতে নেবে। কিন্তু একটি বিষয় আসলে সবাইকে বিব্রত করেছে, সেটি হচ্ছে, ঢালাওভাবে ইউএনও ও ওসিদেরকে বদলি করা। আসলে ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় থাকবে এসআই/দারোগা এবং নির্বাচন অফিসার ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের বহাল রেখে ইউএনও/ওসিকে যে উদ্দেশ্যে বদলি করেছে তা সফল হবে কি/না আমার বোধগম্য নয়। এক্ষেত্রে গণহারে বদলি না করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বদলি করলে মনে হয় সঠিক হতো। তারপরও নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে সিদ্ধান্ত সবাই মাথা পেতে নেবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি মানবাধিকার দিবস পালন করবে। যারা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল জিয়াউর রহমান। এছাড়া জিয়াউর রহমানের নির্দেশে ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ড হয়েছে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আমাদের ২৪ জন নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড তারেক জিয়া। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা সারা দেশে অসংখ্য অগণিত অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ট্রাকের ঘুমন্ত হেলপার হত্যা করেছে, পুলিশ হত্যা করেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা, প্রধান বিচারপ্রতির বাসভবনে হামলা করেছে। তাদের এরকম অমানবিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। যাদের রাজনীতিই হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করা তারা আবার মানবাধিকারের কথা বলে। আমি আমাদের দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুরোধ করে বলব, জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একটি বিপথগামী অংশ জামায়াত-বিএনপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যেন দল কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। তিনি বসুরহাট পৌরসভার চারবারের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। ‘অপরাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্য বচনের’ কারণে তিনি জাতীয়ভাবে বেশ আলোচিত হন।

হাসিব আল আমিন/আরকে