গ্রেফতারকৃত জাকিরুল হক

ফরিদপুরের মধুখালীতে মা-মেয়ের চক্রান্তে এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত দুই নারীসহ তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে তাদের ফরিদপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

তারা হলেন রোজিনা ও তার মা পারুল আক্তার এবং জাকিরুল হক। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা গ্রেফতার তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে মানবপাচার ও ধর্ষণের মামলা করেন।

তরুণীর বাবা জানান, ঘটনায় জড়িত রোজিনা ও তার মা পারুল আক্তার এবং জাকিরুল হক এবং অজ্ঞাত আরও তিন ব্যক্তির নামে মামলা দিয়েছি। আমার মেয়ে এখন কিছুটা সুস্থ। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রথিন্দ্র নাথ তরফদার বলেন, মঙ্গলবার রাতে ওই তরুণীর বাবা মামলা করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে জাকিরুল হক নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে রোজিনা ও তার মা পারুল আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত রোজিনা ও তার মা পারুল আক্তার মধুখালী আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা। এছাড়া জাকিরুল হকের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তিনি মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর চিনিকলের বিদ্যুৎ বিভাগে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ওই তরুণী সুস্থ হলে ২২ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।

ফরিদপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মো. গোলাম কবির বলেন, তরুণীর সঙ্গে খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনায় চিনিকলের বিদ্যুৎ বিভাগের চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী জাকিরুল হক জড়িত জানতে পেরেছি, পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। চিনিকল থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মধুখালী পৌর এলাকার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করেন পারুল আক্তার ও তার মেয়ে রোজিনা। গ্রামের ওই তরুণী রোজিনার বান্ধবী। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছে উপজেলার মাকড়াইল গ্রামে। তার তিন বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়িতে আসার পরই রোজিনা তাদের বাড়িতে গিয়ে দুইজন মিলে নানা গল্প করেন।

রোববার (১১ এপ্রিল) রোজিনা ও তার মা পারুলসহ কয়েকজন ওই তরুণীর বাড়িতে যান। সেখানে বিভিন্ন গল্প করে ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ পর রোজিনা বাড়িতে গিয়ে বলেন- তোদের বাড়িতে মোবাইল ফেলে গেছি, মোবাইলটি দে। কিন্তু ওই তরুণী বলেন- মোবাইল এখানে রেখে যাসনি। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে রোজিনা ওই বাড়ি থেকে চলে আসেন। এরপর বিকেলে রোজিনা ও তার মা পারুল কয়েকজন লোক সঙ্গে নিয়ে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এর দুইদিন পর মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে তাকে অচেতন অবস্থায় তাদের বাড়িতে ফেলে রেখে আসে।

গত রোববার (১১ এপ্রিল) রোজিনা ও তার মা পারুল সহ কয়েকজন ওই মেয়েটির বাড়িতে যায়। ওই বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন গল্প গুজব করে চলে আসেন। কিছুক্ষন পরে রোজিনা ওই বাড়িয়ে গিয়ে বলে তোদের বাড়িতে মোবাইল ফেলে গেছি, মোবাইলটি দে। কিন্তু ওই মেয়েটি বলে মোবাইল এখানে রেখে যাসনি। বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে রোজিনা ওই বাড়ি থেকে চলে আসে। এরপর বিকালে রোজিনা ও তার মা পারুল কয়েকজন লোক সাথে নিয়ে ওই মেয়েটিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। এরপর দুই দিন তারা বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে ওই তরুণীকে চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে গণধর্ষণে সহযোগিতা করেন। এরপর মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় তাদের বাড়িতে ফেলে রেখে আসে।

ভুক্তভোগী তরুণী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি বলেন, মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে রোজিনা ও তার মা পারুল আমার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। রোববার বিকেলে তারা আমাকে তুলে নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর এলাকার একটি বাড়িতে রাখে। রাতে খাবারের সঙ্গে আমাকে কিছু খাওয়ানো হয়। আমি কিছুটা অচেতন হয়ে পড়ি। এরই মধ্যে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এক ব্যক্তি। আমাকে ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে আমি রোজিনাকে বিষয়টি বললে ও আমার ওপর দিকে তেড়ে আসে। আমার কাছে মোবাইল ছিল যে কাউকে কিছু জানাব।

পরদিন সোমবার সেখান থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয় মধুখালী চিনিকল মসজিদ সংলগ্ন একটি বাড়িতে। রাতে সেখানেও আমাকে কিছু খাওয়ানো হয়। এরপর আমি কিছুটা অচেতন হয়ে পড়ি। সেখানেও দুই ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করে। আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। আমাকে ওরা স্যালাইন খাওয়ায়। এরপর আমার অবস্থা খারাপ হতে দেখে মঙ্গলবার সকালে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে আসে।

বি কে সিকদার সজল/এএম