এমপি তুহিনের আয় বেড়েছে ২৪ গুণ, ব্যাংক জমা ৩১১ গুণ
ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা দুই বারের এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তুহিনের বার্ষিক আয়, ব্যাংকে জমা টাকা ও সম্পদ বহুগুণ বেড়েছে।
দশম জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১০ বছরে সেটি ২৪ গুণ বেড়ে হয়েছে ৫৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ১০ বছরের ব্যবধানে ৩১১ গুণ বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯ টাকা। এমপি হওয়ার আগে ছিল মাত্র ৩৮ হাজার টাকা। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হলফনামা ঘেটে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে অংশ নিতে এবারের হলফনামায় এমপি তুহিনের কৃষি খাতে কোনো আয় না থাকলেও এ খাতে নির্ভরশীল ব্যক্তির বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৭ হাজার ৭৫৮ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই সংখ্যক আয় দেখানো হয়েছিল। নিজের বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আয় আগের বারও দেখানো হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাছ চাষে আয় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখানো হলেও এবার তা বেড়ে ৪১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮২ টাকা দেখানো হয়েছে, যা আগের বার দেখানো হয়েছিল আমানত ৭৫ হাজার ৯৭৫ টাকা। দশ বছর আগে স্ত্রীর কোনো পেশা না থাকলেও এখন স্ত্রী চাকরি করে আয় করেন ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১১৮ টাকা। এমপি হিসেবে সম্মানী ও কোম্পানির পরিচালক হিসেবে আয় ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে যা গত নির্বাচনের হলফনামাতেও দেখানো হয়েছিল।
অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১১ টাকা তুহিনের দেখানো হলেও নিজের চেয়ে স্ত্রীর প্রায় ১৭ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। স্ত্রীর নগদ টাকা ৩২ লাখ ২২ হাজার ৬৮১ টাকা। গতবার তুহিনের নগদ টাকা ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৮ হাজার ৮২৪ টাকা এবং স্ত্রীর ৩২ লাখ ২২ হাজার ৬৮১ টাকা। আর ১০ বছর আগে অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজের কাছে নগদ ২ লাখ টাকা ও স্ত্রীর কাছে নগদ ছিল ৫ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
তুহিনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯ টাকা, গতবার দেখানো হয়েছিল ৯১ হাজার ৯২৪ টাকা। এছাড়া এমআরটি এগ্রো লিমিটেডে ১ লাখ ৪ হাজার টাকার শেয়ার অপরিবর্তিত রয়েছে। নিজের নামে ডিপিএস আছে ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১৬ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে স্ত্রীর বিনিয়োগ আছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা। গতবার উল্লেখ করা হয়েছিল নিজের নামে ব্যাংকে আমানত আছে ১১ লাখ ৫১ হাজার ১৯ টাকা এবং স্ত্রীর আছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা। ৯৪ লাখ টাকার জিপ গাড়ি ও কার রয়েছে তুহিনের। গতবার শুধু ৭০ লাখ টাকার জিপ গাড়ি ছিল।
নিজের নামে ১০ তোলা (ভরি) স্বর্ণের দাম দেখানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর ২৫ তোলা (ভরি) স্বর্ণের মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। দশ বছর আগে স্ত্রীর কোনো স্বর্ণ ছিল না। এছাড়া ৬০ হাজার টাকা ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ও ১ লাখ ১০ হাজার টাকার অন্যান্য জিনিসপত্র দেখানো হয়েছে দুই বারই।
স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কৃষি জমি দেখানো হয়েছে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অকৃষি জমি ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে। এছাড়া একটি ফ্ল্যাট, একটি মৎস্য খামার রয়েছে। স্ত্রীর নামে কোনো কৃষি জমি দেখানো হয়নি দুই হলফনামাতেই। ১০ বছর আগে কোনো কৃষি জমি না থাকলেও সাড়ে ৫ শতক অকৃষি জমির মূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৩ টাকা।
দায় হিসেবে এবার উল্লেখ করা হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও রুপালী ব্যাংকে ৬৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৬ টাকা ও বাকিতে মৎস্য খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৫ টাকা। গতবার দায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল অগ্রণী ব্যাংকে কার লোন ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৪১ টাকা।
উবায়দুল হক/এমএএস