মহীয়সী নারী রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যে বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছেন, শৈশব কাটিয়েছেন,  সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে সে বাড়ির দেয়াল খসে পড়ছে। অবহেলায় পড়ে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তার শেষ স্মৃতিটুক হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ গ্রাম থেকেই স্ব-উদ্যোগে পড়াশোনা করেছেন। নারীদের শিক্ষিত ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। পববর্তীতে স্বামীর সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে নারীদের শিক্ষিত করতে মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তার ত্যাগ ও শ্রমের সুবিধা ভোগ করছেন এ সময়কার মুসলিম নারীরা।

রংপুরের পায়রা বন্দের এ বাড়িতে রয়েছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের শেষ স্মৃতি চিহ্ন ভাঙা বাড়ি। এ বাড়ির ২/৩ টি দেয়াল আজও অক্ষত রয়েছে। বাকি দেয়ালগুলোর কিছু অংশ শুধু দেখা যায়। বাড়ির পাশে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে স্কুল, কলেজ ও পাঠাগার রয়েছে। এছাড়াও একটি স্মৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও তা এখনো বন্ধ রয়েছে।

প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ রোকেয়ার শেষ স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পায়রা বন্দের ভাঙা বাড়িতে চলে আসেন। এ বাড়ির দেয়াল ধরে ছবি তোলেন দর্শনার্থীরা আর রোকেয়ার কথা স্মরণ করেন।

রোকেয়ার বাড়িতে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবা আক্তার বলেন, প্রথমবার রোকেয়ার বাড়ি দেখতে এসেছি, অনেক ভালো লাগছে। বইয়ের মধ্যে অনেকবার পড়েছি রোকেয়া সাখাওয়াত ও তার বাড়ির কথা। আজ ঘুরতে এসে তার কথা মনে পড়ছে। তিনি নারীদের জন্য অনেক অবদান রেখেছেন। 

পীরগাছা থেকে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের বাড়িতে এসেছেন জুবাদুর রহমান। তিনি বলেন, আমি এ বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেছি। এখানে আসলে বাড়িটির দেয়ালের জানালার সাথে ছবি তুলি। এ জানালার কাছে আসলে আমার মনে হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন হয়ত এই জানালা ধরে বসেছিলেন এবং বাইরের আলো বাতাস নিয়েছিলেন।

রোকেয়ার বাড়ির সামনে দেখা হয় তরুণ কবি ও লেখন আহসানুল হকের সাথে। তিনি বলেন, এ বাড়িটার সাথে যেমন রোকেয়ার স্মৃতি রয়েছে। মুসলিম নারীদের উত্থানেরও স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু অযত্ন ও অবহেলায় বাড়িটার দেয়াল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও যে দেয়ালগুলো ছিল এখন আর সেগুলো দেখা যায় না। সরকার ও প্রশাসনের এ বাড়িটি সংরক্ষণের দিকে নজর দেওয়া উচিত।

রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বাড়িটির সামনে শুধু একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমার মনে হয় এ সাইনবোর্ড ছাড়া তারা এ বাড়িটি সংরক্ষণের পেছনে একটাকাও খরচ করেনি। যদি এখনো যথাযথভাবে বাড়িটি সংরক্ষণ না হয় তাহলে আগামী প্রজন্মকে খুঁজতে হবে রোকেয়ার বাড়িটি কোথায় ছিল।

তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে এটি লজ্জার বিষয় যে রোকেয়ার বাড়ি সংরক্ষণে এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমাদের ইতিহাস রক্ষার স্বার্থে হলেও এ বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। 

শিপন তালুকদার/এসকেডি