বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস নয় সারাবছর জুড়ে যাদের ভাবনায় থাকে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা তাদের মধ্যে একজন বরগুনার চিত্তরঞ্জন শীল। ত্রিশ বছর ধরে দূর-দূরান্ত থেকে খুঁজে এক এক করে সংগ্রহ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া প্রায় শতাধিক দুর্লভ চিত্র। এছাড়া সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ব্যবহৃত বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন। যেগুলো এখন স্থান পেয়েছে বরগুনার মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বড় ভাইকে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখেছেন চিত্তরঞ্জন শীল। ওই সময়ে সপ্তম শ্রণির ছাত্র চিত্তরঞ্জনের প্রবল ইচ্ছে ছিল শত্রুর সম্মুখে যুদ্ধে যাওয়ার। তবে বড় ভাই তাকে না জানিয়ে চলে যান যুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে দেশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে শুরু করেন যুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন আলোকচিত্র ও স্মৃতি চিহ্ন। যার মাধ্যমে এখন তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরছেন।

বরগুনায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে উৎসাহিত করেছেন চিত্তরঞ্জন শীল। এ কাজকে আরও গতিশীল করতে তার উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে ২০১৯ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোখলেছুর রহমান স্থায়ীভাবে জেলা শিল্পকলা একাডেমির একটি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালালির উদ্বোধন করেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারির উদ্যোক্তা চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই তরুণ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশকে গড়ে তুলতে পারে। এ কারণে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হবে। দেশ স্বাধীন করতে ৯ মাসের যুদ্ধে যারা জীবন দিয়ছেন, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে জানাতে হবে। 

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান করে বলেন, বরগুনায় যে সব যায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্ন আছে বিশেষ করে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর টর্চার সেলকে মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি মহান ও উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে যারা আসবেন তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে বিকশিত করতে মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারি ভূমিকা রাখবে। তরুণ প্রজন্মসহ বরগুনার সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের গ্যালারিতে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এ গ্যালারিকে ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে তৈরি করতে জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। 

আরকে