মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবির ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক উপজেলার হাসাইল গ্রামের আলামিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় আটক বাল্কহেডের ৩ শ্রমিককে আটকের পর সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।  

এদিকে ওই ট্রলার ডুবির ঘটনায় সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন, সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান (৫০) ও মরদেহ উদ্ধার হওয়া নিহত শিফার খালাতো ভাই রাজধানীর ধানমন্ডিতে বসবাসরত মাহফুজুর রহমান (৩৫) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাল্কহেডের ভেতরে ইঞ্জিনের পাশে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ৩ শ্রমিককে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা হলেন, বাল্কহেডের ইঞ্জিন মিস্ত্রি হানিফ নিয়াজি (৫০), লস্কর মো. হানিফ (২০) ও পাচক মো. নাকিব হাসান (২০)।

মুন্সীগঞ্জ সদরের চর আবদুল্লা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মো. হাসনাত জামান সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিখোঁজ ২ জনের সন্ধানে আমাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে ও আশপাশের নদীতে নিখোঁজদের সন্ধান করছি এবং বিভিন্নস্থানে ম্যাসেজ দিয়েছি। আমাদের ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে।  

তিনি আরও বলেন, ঘাতক বাল্কহেডের ৩ শ্রমিককে আটক করে টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। আটক ৩ শ্রমিক জনরোষ থেকে বাঁচতে জব্দকৃত বাল্কহেডের ইঞ্জিন কক্ষে তেল রাখার ড্রামে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় নৌ পুলিশ বাল্কহেড তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তবে ঘটনার পর বাল্কহেডের চালক পালিয়ে গেছে। বাল্কহেডটি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার দশআনি এলাকার মো. নরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোয়েব আলী বলেন, ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক আলামিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছে। আটক ৩ শ্রমিককে মুন্সীগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের হাসাইলের চর থেকে ৪০-৫০ জন যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি হাসাইল ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের বাল্কহেডটি চাঁদপুর থেকে বালু আনতে পদ্মার শাখানদী দিয়ে মূল নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে অসাবধানতাবশত বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠে যায়। এ ট্রলার ডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) ও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিফার (১৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রোববার বেলা পৌনে ২টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী নৌযান দুর্ঘটনাস্থলে আসে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি নদী থেকে টেনে তোলা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ২ জনের সন্ধান না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন স্বজনেরা। জীবিত না পেলেও অন্তত তাদের মুখ শেষবারের মতো দেখতে চান তারা।

ব.ম শামীম/আরকে