আগাছায় বিনষ্ট হবে ভেবে পাটের চারা রক্ষায় মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছেন গ্রামের নারীরা

ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা হওয়ায় গ্রেফতারের ভয়ে প্রায় ৭০ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে পাটক্ষেতের চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আগাছায় বিনষ্ট হবে ভেবে পাটের চারা রক্ষায় মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছেন গ্রামের নারীরা। গত কয়েকদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাটক্ষেত পরিচর্যার কাজ করতে দেখা গেছে তাদের। অনেককেই কোলে সন্তান নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে মাঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৭০ গ্রামের পুরুষ মামলার ভয়ে এলাকাছাড়া। পাটক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কয়েক নারী বলেন, ৫ এপ্রিল সালথার ঘটনায় অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত ২৬১ জন ছাড়াও অজ্ঞাত আরও তিন-চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। ফলে যে কাউকে পুলিশ গ্রেফতারের আশঙ্কা রয়েছে। তাই গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে সবাই পলাতক। এজন্য এসব এলাকা পুরুষশূন্য।

তারা বলেন, কৃষকের অভাবে পরিচর্যার কাজ ঠিক সময়ে করতে না পারায় পাটের চারাগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে পাটক্ষেতে নেমে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।

এসব এলাকার কৃষক পরিবারের কয়েকজন নারী কষ্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাজার করার টাকা নেই। পুরুষরা অন্যের ক্ষেতে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন ভয়ে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। রোজার বাজার-সদাই করতে পারিনি। বাড়িতে আমরা সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছি।

এক নারী বলেন, কিস্তির টাকা দিয়ে ফসল চাষ করি আমরা। এ বছর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি ঠিকমতো চাষাবাদ না হয় তাহলে পাট নষ্ট হবে। আবার চলছে লকডাউন। সবমিলে আমাদের বেঁচে থাকাই কষ্টকর। পুরুষরা ক্ষেতে কাজ করতে পারছেন না। সবসময় ভয়ে থাকেন। আমাদের ক্ষমা করে দিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিলে সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতাম।

গুজব ছড়িয়ে ৫ এপ্রিল সালথা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় দুটি সরকারি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলার আসামি হন কয়েক হাজার মানুষ।

বি কে সিকদার সজল/এএম