সাতক্ষীরা সদরের তুজুলপুরে ইয়ারব হোসেনের ছাদ বাগানে ৩শ প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে। দেশের বিরল প্রজাতির সব গাছ রয়েছে তার সংগ্রহশালায়। আপেল, আঙ্গুর থেকে শুরু করে সুন্দরবনের সব গাছ দিয়ে নান্দনিকভাবে সাজিয়েছেন ছাদ বাগানটি। এদিকে এত প্রজাতির গাছ একসঙ্গে দেখে অবাক হতে বাধ্য দর্শনার্থীরা। 

ছাদ বাগানেরা মালিক ইয়ারব হোসেন সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামের ইছহাক মোড়লের ছেলে। তিনি পেশায় সাংবাদিক। দীর্ঘ বছর যাবত জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তাছাড়া তার একটি কৃষি জাদুঘর ও একটি গাছের পাঠশালা রয়েছে। ২০১৯ সালে বাড়ির দুই তলার ছাদের ১ হাজার স্বয়ার ফিট জায়গা জুড়ে শুরু করেন ছাদ বাগান। এখন তার বাগানে থরে থরে টবে সাজানো রয়েছে প্রায় ৩শ প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এত প্রজাতির গাছ এক সঙ্গে দেখে আবেগাব্লুত হয়ে যেতে বাধ্য যে কেউ।

রোববার (১৭ ডিসেম্বর) গিয়ে দেখা যায়, ইয়ারব হোসেনের ছাদ বাগানে প্রায় ২৬ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। আরও রয়েছে পাঁচ প্রজাতির আপেল, নেশপতি, আঙ্গুর, অ্যাভোকাডো, হাড়ভাঙ্গা, দরিয়ান, আলুবোখরা, কাজু বাদামসহ প্রায় ১৬৫ প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ। তাছাড়া ফুলের মধ্য রয়েছে, কনকচাঁপা, করবী, লালজবা, টগর, কাঞ্চন, কামিনী, চাঁপা ফুল, কৃষ্ণ তুলসি, শিমুল, গাঁদা, গোলাপ, গ্যাজানিয়া, গ্ল্যাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, জিনিয়া, ডায়ান্থাস, ডালিয়া, ডেইজি, ন্যাস্টারশিয়াম, পটুলেকা, পপি, পিটুনিয়া, প্যান্সি, ফ্লক্স, ভারবেনা, মনিং গ্লোরি, সিলভিয়া, সুইট পি, সূর্যমুখী, অপরাজিতা, কদম, করবী, কলাবতি, কেয়া, চম্পা, চামেলি, মাধবী লতা, লিলি, শিউলি, শেফালীসহ প্রায় শত প্রজাতির ফুল।

এখানে রয়েছে জয়তুন, উলটকম্বল, তরুপ, চন্দাল, গদপান, সাদা ধুতুরা, জষ্ঠিমধু, ডায়াবেটিস গাছ, অ্যাজালিয়া, অ্যাস্টার, এন্টিরিনাম, কসমস, কার্নেশন, কৃষ্ণকলি, ক্যামেলিয়া, ক্যালেন্ডুলাসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির বিরল ঔষধি গাছ রয়েছে। এমনকি সুন্দরবনের কেওড়া, গরান, সুন্দরি, ধুন্দুল, গোল, খলিসা, পশুর, ওড়া, গুলঞ্চ ও বাইনও রয়েছে। 

শাকসবজি মধ্যে রয়েছে, বেগুন, লাউ, কুমড়ো, বিটকপি, ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, পেপুল, ঝাল, চুই ঝাল, চোরো ট‍্যাস্কিকাম, বল ঝাল, কামরাঙ্গা ঝাল, ধান ঝাল, পিঁয়াজ, পুইশাক, নুডুলস পাতাসহ সব মিলিয়ে ৩০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এই ছাদ বাগানে।

বাগানটির মালিক ইয়ারব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছের অবদান সবচেয়ে বেশি। প্রকৃতি বাঁচলে প্রাণ বাঁচবে। তাই কোন জায়গা ফেলে রাখা উচিত নয়। সেটা ছাদ হোক, আবাদি জমি হোক কিংবা বাগান হোক সকল জমিকেই আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। চিন্তা চেতনা সঠিক থাকলে সবকিছুকে সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব। সুন্দর একটি চিন্তা থেকেই আমার ছাদের বাগানে ধীরে ধীরে প্রায় ৩শ প্রজাতির গাছ লাগিয়েছি। অবসর সময়টুকু গাছের সাথে সুন্দর ভাবে কেটে যায়। দিন দিন জিনিসপত্রের যে পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সে দিক দিয়ে বিবেচনা করে যদি সবাই যার যার যতটুকু সামর্থ্য অনুযায়ী এভাবে বাগান করি সে ক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে নিজেদের চাহিদাটুকু মেটানো সম্ভব। দেশে চাহিদার তুলনায় ফলের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এভাবে ছোট ছোট করে নিজেরা বাগান করলে নিজেদের চাহিদার পাশাপাশি অন্যদের চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হব।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুব কষ্ট করে সংগ্রহ করেছি গাছগুলো। প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে ছাদ বাগানটি সাজিয়েছি। এখানে অনেক প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় গাছ রয়েছে। যেগুলো মানুষ এখন চাইলেই দেখতে পারে না, সেক্ষেত্রে অনেক দর্শনার্থী বিরল প্রজাতির গাছগুলো দেখতে আমার বাগানে আসেন। এভাবে সংরক্ষণ করা হলে বিলুপ্ত প্রায় গাছগুলো প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। 

স্থানীয় শাহিন আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জীবনে কখনো দেখা হয়নি এমন অনেক গাছ দিয়ে ছাদের বাগানটি সুন্দর করে সাজিয়েছে ইয়াবর হোসেন। খেয়াল করলে দেখা যায় গ্রামের ছাদগুলো ধান শুকাতে কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে এমন ভিন্নধর্মী চিন্তা পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলকে। জনপদের মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে গাছের গুণাগুণ সর্ম্পক্যে। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির অনেক কাজ একসাথে দেখতে। ইয়ারব হোসেন রীতিমত প্রশংসা পাওয়ার মত একটি বাগান গড়ে তুলেছেন।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইয়ারব হোসেন বরাবর কৃষিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন। ফ্রিতে রাসায়নিক সার বিতরণ থেকে শুরু করে নানাবিধ কার্যক্রম নিজ উদ্যোগে করে আসছেন। তার বাড়ির ছাদে রয়েছে নাম না জানা শত শত গাছ। তিনি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেশ পরিশ্রম করে এত গাছের সমারহ এক সঙ্গে গড়েছেন। তিনি রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এ সকল কর্মকাণ্ডের জন্য। তার ছাদ বাগান দেখে যে কেউ উৎসাহ পাবে নিজের অনাবাদি জায়গাটুকুতে বাগান করতে। সেটাতে নিজের চাহিদা মেটানো শতভাগ সম্ভব। পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করাও সম্ভব।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাদের ওপরে এক সঙ্গে এত প্রকারের গাছ সত্যিই অভাবনীয়। তিনি যে কাজটি করেছেন নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তার ছাদ বাগান পরিদর্শন করা হবে। একই সঙ্গে তাকে সার কীটনাশক থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তাছাড়া তার ওখানে যে বিলুপ্তি প্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।

সোহাগ হোসেন/আরকে