দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৯০ জন। এর মধ্যে ১০টি সংসদীয় আসনে ১৫ জন নারী লড়বেন। নারী প্রার্থীরা ২৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৫টি দলের হয়ে লড়বেন। স্বতন্ত্র নারী প্রার্থী রয়েছে ৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী থেকে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রংপুর-৩ আসন থেকে ঈগল প্রতীকে লড়বেন আনোয়ারা ইসলাম রানী।

রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের আট জেলার ৩৩টি আসনে এবার মনোনয়নপত্র জমা দেন ২৩ জন নারী, আর ২৫৫ জন পুরুষ। সব মিলিয়ে ২৭৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা করে। যাচাই-বাছাই এবং ইসিতে আপিল শেষে বৈধ হন ২১৫ জন। প্রত্যাহার প্রক্রিয়া ও প্রতীক বরাদ্দ শেষে বর্তমানে ভোটযুদ্ধে আছেন ১৯০ জন। যার মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ১৫ জন।  

যদিও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ এর তৃতীয় সংশোধনী অনুসারে, রাজনৈতিক দলগুলোকে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব  পদে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী রাখার কথা। তবে, বাস্তবতা ভিন্ন। কোনো বড় রাজনৈতিক দল এই বাধ্যবাধকতা পালন করতে পারেনি বা করছে না। 

রাজনৈতিক দলগুলোকে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির পদে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী রাখার ব্যাপারে ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনের সময়সীসা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ২ জন নারী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়বেন। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছে একজন, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি’র ৩ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ২ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি থেকে একজন। এছাড়া আছে ছয় স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এছাড়া বিভাগের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার আসনগুলোতে পুরুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকলেও ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ে নেই কোন নারী। তবে তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে এই তিন জেলা থেকে অনেকই প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।

বর্তমানে রংপুর বিভাগে যেসব নারী দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রংপুর

উত্তরের বিভাগীয় এই জেলার ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএফ, ইসলামী ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দল এবং স্বতন্ত্র মিলে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র রংপুর-১ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় (ডাব প্রতীক) ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী (নৌকা প্রতীক) এবং একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী (কাঁচি প্রতীক) নারী হিসেবে ভোট যুদ্ধে লড়ছেন।

নীলফামারী

এ জেলায় ৪টি আসনে মোট প্রার্থী ২৬ জন। এদের মধ্যে একমাত্র নারী হিসেবে নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মার্জিয়া সুলতানা (ঈগল প্রতীক) নির্বাচন করছেন।

ঠাকুরগাঁও

এখানকার তিনটি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন দলের মনোনীত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন ১৩ জন। এর মধ্যে দুটি আসনে তিনজন নারী রয়েছে। এরা হলেন_ ঠাকুরগাঁও-২ (হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক কাশিপুর ও ধর্মগড় ইউনিয়ন) আসনে জাতীয় পার্টির মোছা. নুরুন নাহার বেগম (লাঙ্গল প্রতীক) ও বাংলা‌দেশ কং‌গ্রেসের মোছা. রিম্পা আকতার (ডাব প্রতীক) এবং ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল আংশিক) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোছা. আশা মনি (ঈগল প্রতীক)।

দিনাজপুর

বৃহত্তর এ জেলায় ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, এনপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, মুসলিম লীগ, জাসদ, তৃণমূল বিএনপি ছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে বিভিন্ন প্রতীকে ভোটযুদ্ধে লড়বেন ২৬ জন। এদের মধ্যে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি মনোনীত পারুল সরকার লিনা (আম প্রতীক) এবং দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর খানসামা) আসন থেকে একই দলের আম প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আজিজা সুলতানা।

গাইবান্ধা

তিস্তা-ঘাঘট-ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত এ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে ভোট যুদ্ধে লড়ছেন ৩৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে তিনটি আসনে ছয়জন প্রার্থী নারী। এরা হলেন_ গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনে আইরিন আক্তার (বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি), মর্জিনা খান (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনএনপি), আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার (স্বতন্ত্র), গাইবান্ধা-২ সদর আসনে মোছা. মাছুমা আক্তার (স্বতন্ত্র), গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি (আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান সংসদ সদস্য) এবং গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে ফারজানা রাব্বি বুবলি (স্বতন্ত্র-আওয়ামী লীগ)।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীরা ছিলেন সরব। রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে দলীয় মনোনয়ন পাবার দৌঁড়ে মাঠে নেমেছিল অন্তত শতাধিক নারী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পেয়ে, আবার কেউ না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা করেন অনেকেই।

রংপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম বলেন, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে নয় বরং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সব দলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সারা দেশে তৃণমূলের নারী নেত্রীদের ক্ষমতায়ন এবং রাজনৈতিক বিকাশে গুরুত্বারোপ করছে। এ কারণে দেশে নারীর সর্বক্ষেত্রে অগ্রগতি দৃশ্যমান। তবে রাজনীতিতে নারীর সুযোগ বাড়াতে ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।  

বর্তমানে ভোটযুদ্ধে থাকা নারীর সংখ্যা হাতেগোনা হলেও ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনায় আছেন বেশ কয়েকজন। যার মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী রংপুর-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং গাইবান্ধা-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

এছাড়া প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানীও আছেন সাধারণ ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রানী লড়বেন রংপুর-৩ আসনে, এখানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু (একতারা), বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক (ডাব), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম (মশাল) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র শফিউল আলম (আম) লড়বেন।  

প্রসঙ্গত, রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৩২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬২ জন। ভোটার তালিকা অনুযায়ী এসব আসনে নারী ভোটার ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৪১ জন এবং পুরুষ ভোটার রয়েছে ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৪ জন। রংপুর বিভাগে পুরুষের তুলনায় ২ হাজার ২১৭ জন নারী ভোটার বেশি। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ৯৭ জন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে।

আরকে