কেউ বসে আছেন আবার কেউবা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন একজন মানুষের জন্য। যিনি এসে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনবেন, পাশে দাঁড়াবেন। এ দৃশ্য শুধু এক দিনের নয়, বলা যায় প্রায় প্রতিদিনকারই চিত্র।

যার জন্য এই অপেক্ষা তিনি দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক।

নবাবগঞ্জের আফতাবনগরে শিবলী সাদিকের বাসভবনে প্রায় প্রতিদিনই তিন থেকে চার শ মানুষ নানা সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসেন। তিনিও চা-বিস্কুট দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করেন, তাদের সমস্যার কথা শুনেন এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করেন সেসব সমস্যার সমাধান করতে। সরকারের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে অসহায় ও দরিদ্রদের আর্থিক সহায়তা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করার পাশাপাশি পথে-ঘাটেও বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেন তিনি। এসব ঘটনার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, যাতে ব্যাপক প্রশংসা পেতে দেখা যায় এই সংসদ সদস্যকে।

সাধারণ মানুষের যেকোনো সমস্যার কথা শুনলে ছুটে যান তিনি। এমনকি নির্বাচনী এলাকায় না থাকলেও থেমে থাকে না তার জনসেবা। তার অনুপস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য যেকোনো উপায়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই মিলে তাৎক্ষণিক সমাধান।

শিবলী সাদিক দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে আফতাবগঞ্জ বি ইউ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর দিনাজপুর আদর্শ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। একই কলেজ থেকেই অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন শিবলী সাদিক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সংস্কৃতিমনা। কলেজজীবনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৬ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মাদরাসা, মন্দির ও ভাঙা রাস্তা সংস্কার, গ্রামের কাঁচা রাস্তা পাকাকরণসহ মানুষের ভোগান্তি কমাতে অনেক উন্নয়ন করেছেন।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর তা সমাধান করে দিয়েছেন শিবলী সাদিক। তার কাছে এসে কেউ নিরাশ হয়ে ফেরেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এমপি সাহেব (শিবলী সাদিক) খুব ভালো মানুষ। আমার বড় আব্বার (বড় চাচা) কোনো সন্তান নেই। আমাদের এমপি শিবলী সাদিক ভাই বড় আব্বার চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। বড় আব্বা মারা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত বড় আম্মার (চাচি) প্রতি মাসের সব ধরনের খরচ দিচ্ছেন। শুধু আমার বড় আব্বার পরিবারই নয় এলাকার অনেক মানুষের উপকার করেন তিনি।

আফতাবনগর এলাকার শবিপুর গ্রামের রোকসানা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এমপির মতো মানুষ আর হয় না। রাত ২টার দিকে আমার বাসার পাশে বজ্রপাতে একজন অসুস্থ হয়েছিলেন। খবর পেয়ে এমপি সাহেব তখনই এসে খোঁজখবর নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করেন। আমাদের এলাকার অনেক ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালান তিনি। সবার বিপদে সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেন। আমাদের এমপি মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন। বিশেষ করে গরিব মানুষের পাশে সব সময় থাকেন।

ঢাকা পোস্টকে জয়পুর গ্রামের লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের এমপি এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গরিবের সব সমস্যায় তিনি সহযোগিতা করেন। তিনি আমাদের গরিবের এমপি।

আফতাবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র নুর আলিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মতো কয়েক শতাধিক মেধাবী গরিব ছাত্রের পড়ালেখার খরচ বহন করছেন এমপি শিবলী সাদিক। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন, সব সময় খোঁজ খবর নেন।

কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম আনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমপি সাহেব (শিবলী সাদিক) পারিবারিকভাবেই অনেক বিত্তশালী। এমপি হিসেবে মানুষ যায় উনার কাছে, উনিও সবাইকে সাহায্য-সহযোগিতা করেন।

সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের। এসব মানবিক কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দাদা ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ও কুশদহ ইউনিয়নের দীর্ঘ ৪০ বছরের চেয়ারম্যান। আমার বড় আব্বাও (চাচা) ছিলেন একই ইউনিয়নের ৩৫ বছরের চেয়ারম্যান। আমার বাবা (মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু) নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি ছিলেন। আমিও একবার নবাবগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলাম। বর্তমানে দুইবারের এমপি। আমার এ মানবিক কাজের প্রেরণা সত্যিকার অর্থে আমার পরিবার (আফতাব পরিবার) থেকে পাওয়া। আফতাব পরিবার দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শৈশবকালে দেখতাম অসংখ্য মানুষ তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা বলতে আমার পরিবারের মুরুব্বিদের কাছে আসতেন। এসব দেখেই আবার বেড়ে উঠা। এটা আমার পরিবারিক শিক্ষা। সত্যিকার অর্থে ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও এই রংপুর বিভাগের অনেক মানুষ তিনবেলা ভরপেট ভাত খেতে পারতেন না। আমাদের বাড়িতে দেখেছি অসংখ্য মানুষকে কাজ শেষে ভাত-তরকারি নিয়ে বাড়ি ফিরতে। মানুষের জন্য কাজ করা, তাদের প্রতি ভালোবাসা, মমতা সৃষ্টি হওয়া প্রায় সব আমার জন্মসূত্রে পাওয়া। আমার পরিবার মানুষের পাশে ছিলেন, মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এলাকার মানুষের জন্য সেই ধারাবাহিকতাটুকু আমি রক্ষা করে যাচ্ছি। এটাই হয়তো মানুষ আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা করছে। পরিবারের উন্নতি বা বিশেষ কোনো ক্ষমতার জন্য আমরা কখনো রাজনীতি করিনি। এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের জন্য আমাদের রাজনীতি। এখন পর্যন্ত সেটাই করে যাচ্ছি।

শিবলী সাদিক বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন আমরা টেলিফোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফোন করতাম। বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের দায়িত্বে আসার পর আমরা যেটা স্বপ্নেও দেখিনি সেটারও বাস্তবায়ন হয়েছে। আমার এলাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। সেখানে দুই মিনিট আগে কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা দুই মিনিট পরেই আমি জানতে পারছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার মানবিক কাজগুলো যে প্রকাশ করা হয় আমি সেগুলো প্রকাশ করতে চাইনি। সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছেন, সচ্ছলতা রয়েছে এমন মানুষ যেন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রেরণা পায় সেজন্য প্রকাশ করা।

তিনি আরও বলেন, আমরা করোনার সময় দেখেছি বাংলাদেশের অনেক বড় বড় সম্পদশালী মারা গেছেন। মারা যাওযার সময় কাফনের কাপড়, গোলাপজল, একটু আতর কিংবা সুরমা ছাড়া কিছুই নিয়ে যেতে পারেননি। তাহলে মুসলিম হিসেবে আমরা যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, এর পাশাপাশি মানবসেবাও করা উচিত। এ ছাড়া মানবসেবাও কিন্তু ইবাদত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার যে কাজগুলো প্রকাশ হয়েছে সেগুলো আমার ব্যক্তিস্বার্থে বা নিজেকে হাইলাইট করার জন্য কখনো করা হয় না। এসব মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য করি এবং আমি স্মৃতি রেখে যেতে চাই। আমি যখন পৃথিবীতে থাকব না তখন আমার সন্তান যেন জানতে পারে তার বাবা কেমন ছিল। মানুষের মুখে আমি আমার বাবার ভালো কাজের কথা শুনেছি। আমার পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম যারা আছে তাদের আমি শেখাতে চাই, তারাও যেন এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমি একটা বিশাল শান্তি খুঁজে পাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার মানবিক কাজগুলো প্রায় সবাই ভালোভাবে নেয়। দু-একজন বাজে কমেন্ট করে যারা অন্য দলের লোক। আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের মানুষের মানসিকতা এক না।

ঢাকা পোস্টকে মানবিক এই সংসদ সদস্য বলেন, এসব কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। আমি যখন প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করার জন্য বেড়িয়েছি তখন পথে একজন ভ্যানচালক আমাকে ৮০০ টাকা দিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনেও কিছু মানুষ আমার হাতে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। অবাক হই যারা একদিন কাজ না করলে খাবার জুটবে না তারাও আমার হাতে ৫০ টাকা, ১০০ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন। এরকম অসংখ্য মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা আমার সঙ্গে আছে।

বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে শিবলী সাদিক বলেন, আপনার অনেক টাকা থাকলেও আল্লাহ না চাইলে আপনি দশজনের জন্য টাকা খরচ করতে পারবেন না। সকলকে দিয়ে আল্লাহ সব কাজ করান না। জীবিত থাকা অবস্থায় মানুষের মূল্যায়নটা অন্যভাবে হয়। বিত্তবানদের কাছে আমার অনুরোধ, মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ান।

এবারের নির্বাচনে জয়লাভ করলে আপনার নির্বাচনী এলাকার জন্য বিশেষ কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে দিনাজপুর-৬ আসনের এই সংসদ সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর। এখানে অ্যাগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ করার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া কিছু রাস্তাঘাট করার বাকি আছে। এখন আমার সবচেয়ে বড় টার্গেট মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

এমজেইউ