রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার ও তার সমর্থকরা নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান ও তার ছেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত রাশেক রহমান জনগণের রায় পাল্টিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্তে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে মিঠাপুকুর উপজেলার নয়ারহাট বাজার, নয়েনপুর মধ্যপাড়া, হুলাশুগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার এই আশঙ্কার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এ সময় নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা প্রতিরোধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

জাকির হোসেন সরকার বলেন, বর্তমান এমপি আশিকুর রহমান প্রতিটি পদে পদে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। আমার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে আপিলের মাধ্যমে আমি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ৪০ বছর ধরে আমি মিঠাপুকুরে আছি। ভোট নিয়ে অন্যদের মতো পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর আমেরিকায় আমি থাকব না। আমি আপনাদের মাঝেই থাকব। ভোট কারচুপি করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন। কোনো অপশক্তি ভোটে কারচুপির চেষ্টা করলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। নির্বাচিত হলে মিঠাপুকুরের সকল রাস্তা পর্যায়ক্রমে পাকা করার ঘোষণা দেন তিনি।

শঠিবাড়ি এলাকার সেরুডাঙ্গা এলাকার বক্কর মিয়া বলেন, ‘ভোট তো দিবার যামো। কিন্তু হামার ভোটটা কি ঠিক থাকপে। যত কথা শুনোছি, মনে হয় ভোটের দিন ঝামেলা হবার পারে। ভালো ভোট হইলে এবার চেয়ারম্যান সাইব (জাকির) এমপি হিসাবে জিতিবার পারবে।’

ট্রাক প্রতীকের আরেক সমর্থক না প্রকাশের শর্তে জানান, সংসদ সদস্যপুত্র হিসেবে রাশেক রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু জনগণের ধৈর্য হারালে এই আসনে বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা আছে। জাকির হোসেন সরকার স্বতন্ত্র হলেও তিনি আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নন। এখানে জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ রয়েছে। সেটা ৭ জানুয়ারির ভোটে প্রমাণ হবে।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমানের (নৌকা) সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের (ট্রাক)। আসনটি থেকে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমানও। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এখানে তৃতীয় অবস্থানে ছিল লাঙ্গল প্রতীক। এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না থাকায় এখানকার পকেট ভোটে চমক থাকার সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা। ভোটযুদ্ধে এ আসনে নৌকা-লাঙ্গল-ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমান দলীয় প্রতীক (নৌকা), জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুবুর রহমান (ডাব), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল হালিম মণ্ডল (গামছা), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত এনামুল হক (চেয়ার), আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার (ট্রাক), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (একতারা) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) আব্দুল বাতেন (টেলিভিশন) প্রতীকে নির্বাচনে লড়বেন।

রংপুর-৫ আসনে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৩৫ জন। পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য। তিনি এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার সঙ্গে জাকির হোসেন সরকারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, অর্জন ও জনসম্পৃক্ততার লড়াই হবে ব্যালেটে, এমনটাই ধারণা ভোটারদের।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ