সাতক্ষীরা-৪ আসনের (সুন্দরবন ঘেরা শ্যামনগর এবং কালিগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে এ আসন) বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার। তুমুল আলোচিত সরকার দলীয় দুইবারের এই এমপির খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল। নানান কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

ইতোপূর্বে ফেসবুকের বিভিন্ন শর্ট ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটি কাটার বিরতিতে শ্রমিকদের সঙ্গে বসে আম আর কাঁচা মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া, লুঙ্গি পরে নিজ জমিতে চাষাবাদ করা, শ্রমিক বেশে ছাদের ঢালাই দেওয়া, নদী ভাঙন সংস্কারের কাজে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজের সহযোগিতা, রমজানে বাজার খরচ করে অসহায় মানুষের বাড়িতে যাওয়া ও ভিক্ষুকের বাড়িতে ইফতার করাসহ বেশ কিছু কাজ করে অনেকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন এমপি জগলুল হায়দার। একজন সংসদ সদস্যের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকবার প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছেন তিনি। 

সম্প্রতি রাজনীতিসহ নির্বাচনী সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে দেখা গেছে সরকার দলীয় দুইবারের এই এমপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা মিলছে না তার। এতে ক্ষুদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, তার মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশজুড়ে রয়েছে ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত তার কর্মকাণ্ডের ছবি দেখে প্রশংসা করেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। সম্প্রতি তার কর্মকাণ্ডের কোনো ধারাবাহিকতা না পেয়ে ভক্তদের অনেকে অনেকভাবে খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন আলোচিত এই সংসদ সদস্যের। কিন্তু কোনোভাবে তার কর্মকাণ্ডের আভাস মিলছে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একজন আলোচিত মানবিক জনপ্রতিনিধির হঠাৎ পর্দার আড়ালে যাওয়াকে ভিন্নভাবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি নাটকীয় ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে এমপি জগলুলের। ভিডিওতে দেখা গেছে, এমপি জগলুল হায়দার স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তাকে ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার আগে অসহায় হয়ে কথা বলার ধরণ শিখিয়ে দিচ্ছেন। শিখিয়ে দেওয়ার ও পরের অভিনয় করার দুটো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে নেট দুনিয়ায়।

দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি যেসব কর্মকাণ্ড করেছেন সেগুলো সব লোক দেখানো এবং মানুষের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য দিনমজুর শ্রমিকদের শিখিয়ে পড়িয়ে ভিডিও তৈরি করে এতোদিন দেশবাসীকে বোকা বানিয়েছেন, এমনটি বলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জিএম শফিউল আজম লেনিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার দুইবারের এমপি হয়েও এস এস জগলুল হায়দার এখনো নৌকার পক্ষে কাজ করছেন না। তিনি এমপি হয়ে বিভিন্ন সময়ে নাটকের মতো ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে স্বরগরম রাখতেন। তবে বাস্তবে সবই ছিল তার তৈরি করা নাটক। সেরকম একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও দ্বাদশ জাতীত সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার। 

নাটকীয় মানবিকতার বিষয়ে তিনি বলেন, তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আগে থেকেই সন্ধিয়ান ছিলাম। তবে তার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তার মাধ্যেমে প্রমাণিত হয়েছে এসব ঘটনা মানুষের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।

এসব বিষয়ে মুখ খুলেছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নিয়মিত মানুষের কাছে যেতাম সেই ধারাবাহিকতায় ওই ব্যক্তির বাড়িতেও গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনেক কথা বলতে হয়। কারণ তারা ভালো বোঝেন না। তাছাড়া আমি তো কোনো নেগেটিভ কথা বলিনি। 

লোককে শিখিয়ে বুঝিয়ে ভিডিও তৈরি করার প্রসঙ্গে বলেন, আমি ২৩ বছরের জনপ্রতিনিধি। দুইবার এমপি আর দুইবার শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলাম। সাজিয়ে বুঝিয়ে এতো কিছু হয় না। আমার বিরোধীদের চক্রান্ত এটা। 

নির্বাচনী প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে তারা ডাকে না তাই নির্বাচনী প্রচারে যাই না।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা ৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন। তিনি শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনীত হন।

এর আগে, একই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে দুইবার ভোট করেন বর্তমান সংসদ জগলুল হায়দার। ২০১৪ সালে বিরোধীদলগুলো সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিলে এস. এম. জগলুল হায়দার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বারের মত ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।  

সোহাগ হোসেন/এমএএস