সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করতে যাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম। এ আসনে তার কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বিএনপি নির্বাচনে না আসা এবং নিজ দলের বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় জয়ের পথ অনেকটাই মসৃণ শফিউদ্দিন শামীমের। 

শফিউদ্দিন শামীমের এটাই প্রথম কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এর আগে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। 

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলকে বাদ দিয়ে শফিউদ্দিন শামীমকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র কিনেন। তবে শেষ পর্যন্ত ১৭ ডিসেম্বর তা প্রত্যাহার করে নেন। অপরদিকে সংসদ সদস্য নজরুলের স্ত্রী তাহমিনা চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন কিনলেও যাচাই-বাছাইয়ে তা বাদ পড়ে যায়। 

প্রথম চাওয়াতেই নৌকার টিকিট পাওয়া শফিউদ্দিন শামীমের সামনে চ্যালেঞ্জ নেই বললেই চলে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইরফান বিন তোরাব আলী এবং সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন। দ্বিধাবিভক্ত জাতীয় পার্টির ভোট ভাগাভাগির ফলে নৌকার শফিউদ্দিন শামীম বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারেন বলে অভিমত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। 

অপরদিকে, সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার পর তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন নৌকার জন্য কাজ করার জন্য। ফলে, শফিউদ্দিন শামীমকে জয়ী করতে একাট্টা এ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটার-সমর্থকেরা। সংসদ সদস্য নজরুলের অনুসারী সকল ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যরাও সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে শফিউদ্দিন শামীমের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

আওয়ামী লীগের শক্ত আরেকটি গ্রুপ উপজেলা চেয়ারম্যান এএনএম মঈনুল ইসলাম ছিলেন সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের ঘোর বিরোধী। উপজেলা চেয়ারম্যান মঈনুল তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শফিউদ্দিন শামীমের নৌকাকে জয়ী করতে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন জোরালোভাবে। ফলে উপজেলার দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শফিউদ্দিন শামীমকে সমর্থন দিয়ে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। যা শফিউদ্দিন শামীমের রাজনৈতিক সফলতার অন্যতম একটি দিক বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।  

দানবীর হিসেবে পরিচিত শিল্পপতি শফিউদ্দিন শামীমকে ভোট দিতে পারেন অন্য দলের অনেক সাধারণ সমর্থকেরাও। সারা উপজেলায় দুঃস্থ মানুষদের সহায়তা ছাড়াও, জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত মানুষেরা পেয়েছেন চিকিৎসা সহায়তা। এসকিউ ফাউন্ডেশন গঠন করে করোনাকালীন সময়ে জরুরি অক্সিজেন সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন আগেই। তবে এবার রাজনীতির মাঠ গোছানোর সময় উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় অস্বচ্ছল বেকার যুবকদের মাঝে রিকশা, বেকার নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ, প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে গর্ভবতী মায়েদের ভাতা প্রদানসহ বেশকিছু সহযোগিতামূলক কাজ করেছেন যা গোটা উপজেলায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা সত্ত্বেও শফিউদ্দিন শামীম একদম থেমে নেই। প্রতিদিন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতিটি ভোটারের দ্বারে দ্বারে। চাচ্ছেন ভোট। তবে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই তার এই উদ্যোগ দাবি করে আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন শামীম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ্বাস করে নৌকা দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে নিরাশ করবো না। বিএনপি জামায়াত অপশক্তি চাইছে ভোটকেন্দ্রে যেন মানুষ না যায়। আমি এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে কেন্দ্রে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতিসহ জয়ী হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ আসনটি উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।

প্রসঙ্গত, শফিউদ্দিন শামীম কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট স্কটল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শিক্ষাজীবন শেষে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। তার হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এসকিউ গ্রুপ। এ গ্রুপের মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ২৩টি শিল্পকারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে ৬ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আরিফ আজগর/এমএএস