মহান মুক্তিযুদ্ধে নাটোরের গণ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে আসা প্রশিক্ষক শহীদ ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমান স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও কোনো স্বীকৃতি পাননি। মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতেই শুধু নয় নাটোরের কোনো স্মৃতিস্তম্ভে বা নাম ফলকেও ঠাঁই হয়নি তার নাম। অথচ নাটোরের সব মুক্তিযোদ্ধারাই তার বীরত্বগাথার কথা জানেন।  

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) নাটোরে আয়োজিত শহীদ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমানের স্মরণ সভায় অতিথিরা এসব কথা বলেন। এদিন বেলা ১১টায় নাটোরের জেলা খাদ্য বিভাগ কার্যালয় চত্বরে এই সভার আয়োজন করে জেলা খাদ্য বিভাগ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সভায় বক্তারা বলেন, শহীদ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধকালীন সেনাবাহিনী থেকে নাটোর মহকুমা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ওই সময় অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেও সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান নাটোরের মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে বর্তমান রাণীভবানী সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। এ কথা জানাজানি হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে আটক করে। পরবর্তী সময়ে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমানের বীরত্বপূর্ণ অবদান নিয়ে গবেষণা এবং স্বীকৃতির দাবি জানান বক্তারা।

শহীদ ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ মেয়ে আমেরিকা প্রবাসী সিতারা নাহিদ বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর আমার মা মারা গেছে। তখনও আমার মা তার স্বামীর কোনো স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি। আমাদের অর্থের কোনো অভাব নেই, বাবার পেনশনের একটি টাকাও আমার মা কখনো সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করেননি। তাই আমরা অর্থ না, চাই বাবার প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি। 

শহীদ ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে হাফিজ মনসুর রহমান বলেন, বহু বছর ধরে আমরা দেশের বাইরে রয়েছি। সেভাবে যোগাযোগ না করতে পারায় হয়তো বাদ পড়েছে বাবার নাম। তিনি বলেন, গত বছর থেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরাঘুরি করেও এর সমাধান পাচ্ছি না। খাদ্য বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি দাবি জানান।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খন্দকার রেজাউল হকের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফিরোজ আখতার মনি, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রশিক্ষক জমসেদ আলী, শহীদ ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমানের আমেরিকা প্রবাসী বড় মেয়ে সিতারা নাহিদ এবং অস্টেলিয়া প্রবাসী ছোট ছেলে হাফিজ মনসুর রহমান, লেখক-গবেষক খালিদ বিন জালাল বাচ্চু ও খাদ্য বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।

গোলাম রাব্বানী/আরকে