হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে গোলাম রাব্বানী (২৫) নামে এক যুবক থানায় ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ওই যুবককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। 

গতকাল মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে গোলাম রাব্বানীকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় এনে পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তার বড় ভাই মোহাম্মদ মঈন উদ্দিনের। রাতে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাব্বানীর শরীরে ব্যাপক আঘাতের চিহ্নের একটি ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে ভাই হত্যার বিচার চান তিনি।  

মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১০টায় খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে রাব্বানীর মরদেহ দেখতে পাই। এ সময় তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যায়। আমি নিজে ওই ভিডিও করি। আমার ভাইয়ের পুরো শরীর ক্ষত-বিক্ষত করেছে তারা (পুলিশ)। সারা শরীরে শুধু লাঠির আঘাত ও নির্যাতনের চিহ্ন। 

তিনি বলেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে বাড়ির সামনে থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ আমার ভাইকে তুলে আনে। তবে আমরা পরিবারের কেউ বিষয়টি জানতাম না। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা জানতে পারি সে বানিয়াচং থানায় আছে। তখন আমার মা থানায় যান। থানা থেকে আমার মাকে জানানো হয় রাব্বানীর বুকে ব্যথা, তাই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাত ১০টার পর বানিয়াচং থানা থেকে জানানো হয়- রাব্বানী থানার গেস্ট রুমে তার স্যান্ডো গেঞ্জি ও কোমরের বেল্ট খুলে ফ্যানের সাথে বেঁধে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। 
আটকের পর রাব্বানীকে হাজতে রাখার কথা। গেস্ট রুমে কেন তাকে রাখা হবে বা পুলিশ কোথায় ছিল?- এই প্রশ্ন তুলে তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে বানিয়াচং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম চুরির অভিযোগে একাধিক মামলার আসামি গোলাম রাব্বানীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। এ নিয়ে মুঠোফোনে এসআই মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি আটক করেছেন বলে জানান। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি পরে ফোন দিয়ে জানাবেন বলে কল কেটে দেন।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে গোলাম রাব্বানীর মৃত্যুকে আত্মহত্যা উল্লেখ করে বলেন, নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যার অভিযোগ সঠিক নয়। রাব্বানীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কক্ষে রাখা হয়। সেখানে সে তার বেল্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে বেঁধে ঝুলে পড়ে। পুলিশ টের পেয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাতেই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গোলাম রাব্বানীর সুরতহাল হয়। সে সময় তার পরিবার কোনো অভিযোগ করেনি। এই ছেলের নামে কয়েকটি চুরির মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।

ঘটনার রাতে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, চুরির মামলায় গোলাম রাব্বানীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলে হাজতে ঢোকানো হয়। আনুমানিক এশার নামাজের সময় পুলিশ তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা আক্তার বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল। 

এদিকে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) হবিগঞ্জ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গোলাম রাব্বানীর মরদেহ বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাদ মাগরিব বানিয়াচং সদরের নন্দীপাড়া এলাকার বিবির মোকাম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

আজহারুল মুরাদ/আরএআর