তিস্তা ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাস সড়কের কোলঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৩০ শতাংশ অধিগ্রহণকৃত জমি দখল করে ‘বৈরালী ফাস্টফুড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার’ খুলেন লালমনিরহাট-১ আসনের পিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক। এরপর তা উচ্ছেদ করতে নিয়োগ করা হয় ম্যাজিস্ট্রেট। এর নয় মাস পর আলোচিত বৈরালী রেস্তোরাঁসহ ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে প্রশাসন।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার পর তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) জমির ওপর নির্মিত আলোচিত বৈরালী রেস্তোরাঁসহ আশপাশের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। ‌

এপিএস আবু বক্কর সিদ্দিক (শ্যামল) উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তবে ভেঙে ফেলার সময় বৈরালী রেস্তোরাঁসহ শ্যামল উপস্থিত না থাকলেও রেস্তোরাঁর পার্টনার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন আক্তার উপস্থিত ছিলেন।  

লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসফাকুল কবির উচ্ছেদ অভিযান সময় সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অবশেষে দখলমুক্ত করা হলো। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নয় মাস পর উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গড্ডিমারীর ইউনিয়নের দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারাজ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) অধিগ্রহণ করা ২৫ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করে নির্মিত বৈরালী রেস্তোরাঁটি ২০২২ সালের ৭ জুলাই বিকেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন উদ্বোধন করেন। সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তি ও নানা প্রক্রিয়ার পর চলতি বছর ১২ মার্চ বৈরালীসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক। কিন্তু ওই আদেশের দীর্ঘ নয় মাসেও তা উচ্ছেদ হয়নি। অবশেষে আজ বুধবার বৈরালীসহ সেখানে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

নীলফামারী পাউবোর ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানিতে নির্মিত তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস লাগোয়া ২৫ শতাংশ জমিতে অবৈধভাবে ২০২১ সালে বালু ভরাট শুরু করে ওই বছরের নভেম্বর মাসে অবৈধ স্থাপনার নির্মাণ কাজ শেষ করেন শ্যামল।

পাউবোর ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ২০২২ সালের ৬ জুন এবং ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর তিস্তা ব্যারাজের অধিগ্রহণ করা জমিতে বৈরালী রেস্তোরাঁসহ তালিকাভুক্ত ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়। উচ্ছেদের জন্য তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে ২০২৩ সালের ১২ মার্চ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেন লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া নওরীন, লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আল সোহান এবং লালমনিরহাটের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসফাকুল কবির, হাতীবান্ধা থানা পুলিশের (ওসি) সাইফুল ইসলাম। এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার বাহিনী ও পাউবোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএএ