লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আটকের পর আবদুর রহিম রনি নামে এক আসামিকে মারধরের অভিযোগে ৭ পুলিশের নামে দায়েরকৃত মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

আদেশ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী অঞ্চল রায়পুর আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন এ আদেশ দেন।

গতকাল রাত ১০টার দিকে আদালতের পেশকার নুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুপুরে রিনা আক্তার নামে এক নারী তার স্বামীকে মারধরের ঘটনায় ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তখন বিচারক আদেশ দেননি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারক। শিগগিরই আদেশের কপি পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হবে। 

অভিযুক্তরা হলেন— রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, মো. আবু হানিফ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্যা ও ইউসুফ ঢালি।

মামলার বাদী রিনা রায়পুর উপজেলার পূর্ব চরপাতা গ্রামের আব্দুর রহিম রনির স্ত্রী। পুলিশের দায়েরকৃত তিনটি মামলায় তার স্বামী রনি জেলা কারাগারে রয়েছেন। রনি পূর্ব চরপাতা গ্রামের মো. শহীদুল্লাহর ছেলে।

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী বলেন, রনিকে আটকের সময় তার কাছে কোনো ধরনের অস্ত্র ও মাদক পাওয়া যায়নি। তাকে থানা হাজতেও রাখেনি অভিযুক্তরা। কোনো একটি গোপন কক্ষে রেখে তাকে মারধর করে। পরে একইদিন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছে। এ ঘটনায় রনির স্ত্রী রিনার মামলা আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ কপি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে।  

এজাহার সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের বর্ডার বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে অভিযুক্তরা রনিকে আটক করেন। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে গেছেন। পরে তাকে নিয়ে এসে মারধর করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় বারবার গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারেও খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। এতে স্বামীর সন্ধান চাইলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় তাকে। পরে তিনি এসআই হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে ২ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এতো টাকা নেই বলে জানালে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতি কালে রনিসহ দুইজনকে একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র, ১৮০ পিস ইয়াবা ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

রিনা আক্তার বলেন, একদিন আগে আটক করে অভিযুক্তরা আমার স্বামীকে মারধর করে। আমি বার বার থানায় গেলেও তারা আমার স্বামীকে দেখায়নি। পরদিন রাতে তারা আমার স্বামীর নামে ৩টি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে আমি মামলা করেছি।

মামলায় প্রধান অভিযুক্ত রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বলেন, মামলার বিষয়টি আমি জানি না। ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে অভিযান চালিয়ে আমরা রনিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তারা মামলা করতেই পারেন। তবে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। রনির বিরুদ্ধে এর আগেও কয়েকটি মামলা রয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, অস্ত্র, মাদক ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় রনিকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তার স্ত্রীর আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমার জানা নেই। তাদের কাছ থেকে এসআই হানিফের টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আসামির স্ত্রী আমার কাছে কোনো অভিযোগও করেননি। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/এনএফ