কঠোর বিধিনিষেধেও সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র
ছুরিকাঘাতে নিহত আল-আমিন
শত শত মানুষের আনাগোনার নগরীতে এখন সুনসান নীরবতা। রাতের পরিবেশটা আরও সুনসান। নগরীর এমন চিত্র কখনো দেখেনি সাভারবাসী। করোনা মহামারি ঠেকাতে সর্বাত্মক লকডাউনের নিয়ম মেনেই চলছে এই নগরীর খেটে খাওয়া মানুষ। তবে কথায় আছে চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। নীরবতা আর রাতের আঁধারে ওৎ পেতে থাকে একদল হিংস্র মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষের সর্বস্ব লুট করাই তাদের কাজ। ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে এই সব হিংস্র হায়েনারা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশের মতো কঠোর লকডাউনে সাভার। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হলে পড়তে হচ্ছে পুলিশি জেরায়। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ঘর থেকে বাইরে আসছেন না। এ কারণে প্রায় জনমানবহীন সাভারের প্রায় এলাকা। সন্ধ্যা হলেই বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ দোকানপাট।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লকডাউনের তিন দিন পার না হতেই সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুড়িকাঘাতে যুবক নিহত, আশুলিয়ার পল্লিবিদ্যুৎ এলাকায় দিন মজুরের টাকা ছিনতাই, কাঠগড়া এলাকায় চুরি করতে গিয়ে চোরকে লোকজনের ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কঠোর বিধিনিষেধের আগের রাত থেকেই মূলত ছিনতাইকারীসহ চোরের দল সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। গত ১৩ এপ্রিল রাতে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আল-আমীন (১৭) নামে এক বিক্রয় প্রতিনিধি নিহত হয়। সে বিভিন্ন দোকানে সকালে মালামাল পৌঁছে সন্ধ্যায় টাকা তুলে বাসায় যেত। এদিন টাকা তুলে বাসায় ফেরার পথে অজ্ঞাত দুইজন ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বলে দাবি পরিবারের।
বিজ্ঞাপন
নিহত আল-আমিন টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানার উত্তর গাজাইর গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে। সে সজীব কর্পোরেশনের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করত। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা সামাদ।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে আশুলিয়ার পল্লিবিদ্যুৎ এলাকার আরইবি রোডের হাজি মার্কেটের রাসেল স্টোর নামে একটি দোকানের সামনে দিন মজুরদের টাকা ভাগাভাগির সময় পুলিশ পরিচয়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মনির নামে এক ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ।
অন্যদিকে আশুলিয়ার উত্তর কাঠগড়া এলাকায় সন্ধ্যায় বাড়ির চারপাশে চোরকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয়রা। পরে সংঘবদ্ধ হয়ে চোরকে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি লকডাউনে সবাই ঘরের ভেতরে থাকায় এ ধরনের ছিনতাইকারী ও চোরের উপস্থিতি বেড়েছে। আগে কখনও এই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের সুযোগ অনেকেই কাজে লাগাচ্ছে। যেহেতু প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছে না তাই প্রয়োজনীয় কাজ সন্ধ্যার আগেই শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে। এ ছাড়া পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি শনাক্ত করে তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজনকে আটকও করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এসপি