মই বেয়ে উঁচু গাছসহ বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সাঁটানো থেকে শুরু করে প্রচার-প্রচারণাসহ সকল কাজই করতে দেখা গেছে শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফাকে। শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী খরচ কমানো ও নির্বাচন-পরবর্তী দুর্নীতি রুখতেই এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা করে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলে ত্রুটিপূর্ণ স্বাক্ষরের অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আপিল বিভাগ থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে অন্য সবার মতো প্রচার-প্রচারণাসহ ভোট প্রার্থনা করলেও অনেকটাই ব্যতিক্রম তিনি। প্রতীক বরাদ্দের পর গোলাম মোস্তফা একটি অটোরিকশা ভাড়ায় নেন। ভাড়ায় নেওয়া অটোরিকশায় দুইটি মাইক, পোস্টার, লিফলেটসহ পোস্টার সাঁটানোর উপকরণ থাকে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে মাইকে প্রচারণা করার পর যে অবশিষ্ট সময় থাকে, সেই সময়ে তিনি নিজেই ওই অটোরিকশা চালকসহ দুই সহযোগীর সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার সাঁটান। একজন এমপি প্রার্থীর এমন কর্মকাণ্ডে ভোটারদের অনেকেই আশ্চর্য হন। আবার অনেকে তার কর্মস্পৃহাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঈগল প্রতীককে সমর্থন দেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের ভোটার আব্দুল হালিম খলিফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংসদ সদস্য প্রার্থীরা যে কাজ করতে জানে, তা গোলাম মোস্তফাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। তিনি নিজে গরিব মানুষ। যদি তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে এমন সাধারণভাবে সকল কাজ করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আফজাল হোসেন নামের আরেকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা অসাধারণভাবে নিজের প্রার্থিতা সকলকে জানান দিচ্ছেন। প্রার্থী নিজেই একটি অটোরিকশা নিয়ে দিনভর পরিশ্রম করছেন। যতটুকু জানি তিনি সঠিকভাবে আচরণবিধি মানছেন। তার আচারব্যবহারও অন্তত মার্জিত। তিনি ভালো লোক। দেশের জন্য কিছু করার মনমানসিকতাসহ সক্ষমতাও রয়েছে তার। বাকিটা নির্ভর করবে ভোটারদের ওপর।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থীদের সঙ্গে কিছু নেতাকর্মী থাকে, যাদের টার্গেটই হলো প্রার্থী বিজয়ী হলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করা। নেতাকর্মী নেই বলে আমি নিজের পোস্টার নিজে সাঁটাচ্ছি, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। বরং আত্মীয়স্বজনসহ নেতাকর্মীদের আমি নিজেই আমার ঈগলের প্রতীকের প্রচার-প্রচারণার সুযোগ করে দিচ্ছি না। যাতে আমি বিজয়ী হলে তারা আমার থেকে অনৈতিক সুযোগ গ্রহণের আশা করতে না পারে। সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। নিজেকে পরির্বতন যে করেছি তার প্রমাণ দিতেই এভাবে নিজের প্রচার নিজে করছি। দেশের মানুষ পরির্বতন চায় বলেই আমাকে ভোট দেবে। ইনশাল্লাহ, ঈগল প্রতীকের হাজার হাজার সমর্থক-ভোটার রয়েছেন। বিজয়ী হলে ইনশাল্লাহ আমি শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করবো।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী গোলাম মোস্তফা এমকম পাস। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়া তার কোনো অস্থাবর সম্পদ নেই। তিনি ৫ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি টিনের ঘরের মালিক। শরীয়তপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপুসহ অন্যান্য দলের ৪ জন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে গোলাম মোস্তফাকে।

সাইফ রুদাদ/এমজেইউ