দাদি, বাবা, আর ছোট দুই বোনের শেষ বিদায়ের সময় বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া জান্নাতুল মারুফা (৮)। একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোখের জলে তাদের শেষ বিদায় দিচ্ছিল সে। অটোরিকশাচালক বাবা জামাল উদ্দিন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মা মরিয়ম আক্তার টাকা জমিয়ে যে আট শতক জমি কিনেছিলেন, সেই জমিতেই রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে দাফন করা হয় তাদের।

গতকাল শনিবার নান্দাইল উপজেলার বীর ঘোষপালা গ্রামে বসতঘরে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- জামাল উদ্দিন (৪০), তার মা আনোয়ারা বেগম (৭০) এবং জামালের দুই মেয়ে ফাইজা মনি (৬) ও আনিকা (৪)। রোববার সকাল ১০টায় নিহতদের বাড়ির সামনে থাকা ফসলি জমিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের লোক ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষ হওয়ার পর একে একে চারজনের মরদেহ চারটি কবরে নামানো হয়। মাঝখানে জামালের দুই মেয়েকে রেখে দুই পাশে জামাল ও তার মা আনোয়ারাকে দাফন করা হয়।

জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি করেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। স্বামী-সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতে বাড়িতে আসেন তিনি। 
মরিয়ম জানান, স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে জমি কিনেছিলেন। সেই জমিতে বাড়ি বানাতে পারেননি। এখন তাকে ছেড়ে সবাই চলে গেলেন। এ কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি মূর্ছা যান।

অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া জামালের বড় মেয়ে জান্নাতুল মারুফা জানায়, দুপুরের পর সে ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বাবা, দাদি ও ছোট দুই বোন ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তখন সে দাদির শরীরে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে (মারুফা) প্রচন্ড ঝাঁকি খেয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে ছিটকে পড়ে। তখন দাদি বলে চিৎকার করতে থাকলে কিছুটা দূরে পুকুরে গোসলরত বড় চাচা নুরুল হক ছুটে এসে শুকনো বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেন।

উবায়দুল হক/আরএআর