দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গংগাচড়া ও আংশিক সিটি কর্পোরেশন) আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক বহিষ্কৃত মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সিনিয়র সহকারী জজ ও রংপুর-১ আসনে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মোছা. আয়শা আক্তার এ নোটিশ প্রদান করেন।

মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোটারদের ভূরিভোজ করানোর অভিযোগ পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। আগামীকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে তাকে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‌‌‌‌‌‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি (মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ) রংপুর-১ আসনে একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা আপনার নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ কোলকোন্দ তাকিয়া শরীফ আলিম মাদরাসা মাঠে নির্বাচনী পথসভায় আসা লোকজনের মাঝে (প্রায় ৭ হাজার) একটি গরু ও চারটি খাসি জবাই করে খাবার পরিবেশন করেছেন। আপনার এমন কার্য দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সচিত্র প্রতিবেদন সূত্রে অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট গোচরীভূত হয়। এ ছাড়া একই বিষয়ে জালাল নামের একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করা অভিযোগপত্র গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।’

আরও বলা হয়েছে, ‌‘আপনার (মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর) এরূপ কার্য সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮ এর বিধি ১০(চ) ধারা লঙ্ঘন করেছে মর্মে অত্র নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়। আইন ভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, মর্মে আগামী ১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’

মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর পথসভায় আসা লোকজনের মাঝে খাবার বিতরণ

এর আগেও গত ২৫ ডিসেম্বর আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ করে রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানীকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ উঠে।

পরপর দুইবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মমিনুর ইসলামের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, রংপুর-১ (গংগাচড়া ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮নং ওয়ার্ড) আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব, বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ ‘ট্রাক’, গংগাচড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র আসাদুজ্জামান বাবলু ‘কেটলি’, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন ‘হাতুড়ি’, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘সোনালী আঁশ’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাবিবুর রহমান ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় ‘ডাব’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন ‘মোড়া’ এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীনুর আলম ‘ঈগল’ প্রতীকে লড়ছেন।

এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫ জন, পুরুষ ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। এখানকার ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬৬৬টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ৯ জন নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকলেও মূলত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘কেটলি’ ও ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ