ইনসেটে নিহত শেখ আবির হোসেন

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বিউমন্টে ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের গুলিতে শেখ আবির হোসেন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশি গবেষক নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত শেখ আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

নিহত শেখ আবির হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 

শেখ আবির হোসেন টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী ছিলেন। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাদের একমাত্র শিশুকন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। 

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।

আবিরের মেজো ভাই শেখ জাকির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই আবির খুব মেধাবী ছিল। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য স্কলারশিপ পায়। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করতো। যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার ছয় মাস পরে তার স্ত্রী ও বাচ্চাকে সেখানে নিয়ে যায়। গবেষণা কাজের পাশাপাশি টেক্সাসের স্থানীয় ক্রিস ফুড মার্ট নামে একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন কাজ করতো আবির। 

ওই রেস্টুরেন্টে ইতোপূর্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী এসে চাঁদা দাবি করে। বিষয়টি আবির স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করে। ফের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সেই সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টে এসে সিগারেট নিয়ে টাকা না দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় আবির বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা আবিরের মাথায় ও বুকে তিন রাউন্ড গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থলেই আবিরের মুত্যু হয়। পরবর্তীতে ক্রেতারা এসে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে হিমাগারে রাখে। 

জাকির হোসেন আরও বলেন, ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আবির যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করে আর ঠিক তার এক বছর পরে তার মৃত্যু হলো। আবিরের মৃত্যুর খবর শুনার পর থেকে মা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া পরিবারের সকল সদস্যের মানসিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।

নিহত আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম নিউইয়ার্ক থেকে বোরবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাবা-মায়ের সাথে আমি নিউইয়ার্কে অবস্থান করছি। এখান থেকে টেক্সাসের দূরত্বটা বেশ। টেক্সাসে অবস্থান করা আমার কাজিনরা মরদেহ নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। আমি তার লিগ্যাল অভিভাবক হওয়ায় আমার স্বাক্ষর ছাড়া তার মরদেহ হস্তান্তর করবে না। এখানে বর্তমানে ছুটি চলছে। তাই সেখানকার একটি হাসপাতালের হিমাগারে মরদেহটি রাখা আছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার তার ময়নাতদন্ত শেষে নিয়ম অনুযায়ী মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে সেখানকার পুলিশ জানিয়েছেন। 

কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আবিরের মৃত্যুতে তার পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়েছেন বলে জেনেছি। সকল নিয়ম কানুন শেষে তার মরদেহ দেশে পাঠানো হবে বলে জানতে পেরেছি। 

সোহাগ হোসেন/আরএআর