বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম নির্মাণের পুরো টাকাটাই সরকারের গচ্চা গেছে। এটি একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ হয়েছে। আমি পুরো ভবনটি ঘুরে দেখলাম। এখানে অসংখ্য অসঙ্গতী রয়েছে।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

মেয়র আরও বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করে যাওয়ার পর আজকে পর্যন্ত ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। এটি আমাদের জন্য চরম লজ্জার। কাজের সঠিক মান ও নকশা অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই না করে কারো কাছে হস্তান্তর করা অনুচিত। আমি মিলনায়তন নির্মাণকাজ যাচাই করে দেখব।

আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ে সিটি কর্পোরেশনে যখন যা ইচ্ছা সেটাই করা হয়েছে। তৎকালীন যারা দায়িত্বে ছিলেন অডিটোরিয়ামের এই বেহাল দশার দায় তারা কিছুতেই এড়াতে পারেন না। সরকার এত টাকা ব্যয় করলেও অডিটোরিয়ামটি ব্যবহার যোগ্য হলো না। এই ভবনের নির্মাণকাজ খুবই নিম্নমানের। এই কাজে সরকারের টাকা এনে গচ্চা দেওয়া হয়েছে আমি সেই চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরব। এই অনয়িমের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, কিভাবে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

এসময় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাসুমা আক্তার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমতিয়াজ মাহমুদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি অডিটোরিয়ামের নির্মাণকাজ শুরু করে। ১৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ শুরুর পর দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় মেয়াদের এক বছর পার হওয়ার পর আবারও কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও নকশা পাল্টে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ২৫ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন নির্মাণ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু দ্বিতীয় দফার মেয়াদ বাড়ালেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যান। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধন করানো হলেও নকশা অনুযায়ী এখানে অনেক কাজ বাকি আছে। কাজ বাকি থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিল বুঝিয়ে দেয় সাদিক আব্দুল্লাহর পরিষদ। আর ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে অডিটোরিয়ামের নির্মাণে অর্থ লোপাটের অভিযোগ এনে গত বছর তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। অডিটোরিয়াম নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মোমেন সিকদার ছিলেন সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ঘনিষ্ঠজন। বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম প্রকল্পের প্রথম পরিচালক ছিলেন কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান। এরপরে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোতালেব হোসেন এবং এরপরে প্রধান প্রকৌশলী খান মো. নুরুল ইসলাম।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে