ফেলানীর কবর

২০১১ সালের আজকের দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী (১৫)। বিএসএফের গুলিতে বহুল আলোচিত কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। একযুগ পার হয়ে গেলেও বর্বরোচিত নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পায়নি পরিবার।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলোনিটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম বড় মেয়ে ফেলানী। ইটভাটার কাজের জন্য সপরিবারে ভারতের বঙ্গাই-গাঁও এলাকায় থাকতেন তারা। ফেলানীর বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাংলাদেশে আসার জন্য উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তের ৯৪৭/৩ নম্বর পিলারের পাশ দিয়ে বাবার সঙ্গে বাঁশের মই বেয়ে কাঁটাতার পাড় হওয়ার চেষ্টা করে সে। এ সময় ভারতীয় চৌধুরীহাট ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে।

সে সময় ফেলানীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশবিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝর তোলে। পরে ২০১৩ সালের (১৩ আগস্ট) ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। একই বছরের (৬ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় সেই আদালত। 

 বিএসএফের গুলিতে নিহতের পর ফেলানীর এ ছবি দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছিল

পরে বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের (২২ সেপ্টেম্বর) পুনরায় বিচার শুরু হলে সেখানেও খালাস পান অমিয় ঘোষ। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা (মাসুম) এর মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানীর দিন পিছালেও এখনো আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের আশা করছেন তার পরিবার।

ফেলানীর ছোট ভাই জাহান উদ্দিন বলেন, ১৩ বছর হয়ে গেল, আজও আমার বড় বোন হত্যার বিচার পেলাম না। ফেলানী আপা আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতো তা ভুলতে পারি না। যার বোন হারিয়েছে তারাই শুধু বলতে পারবে বোন হারানো কষ্ট। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন আমার বোনকে যে হত্যা করেছে তার যেন সঠিক বিচার হয়।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে আমার স্বামীসহ গিয়েছি, কিন্তু ১৩ বছরেও ন্যায়বিচার পেলাম না।

ফেলানীর পরিবারের সদস্যরা

ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম বলেন, দুইবার কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পাইনি। ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছি। শুনানি হচ্ছে না। তারপরও আশা ছাড়িনি। প্রতীক্ষায় আছি। আর যত দিন ন্যায্য বিচার না পাব, এ সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

স্থানীয় আফজাল ও আমিনুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে সাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়াটা দুঃখজনক। ফেলানী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানাই আমরা।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনি সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, সীমান্তে হত্যার শিকার ফেলানীর মামলাটির শুনানি হওয়া দরকার। যেহেতু দুই রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শান্তিপূর্ণ বর্ডারের জন্য নিশ্চয়ই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কিছু নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি ফেলানীর পরিবার ক্ষতিপূরণ পাক এটাই আমাদের চাওয়া। 

মো. জুয়েল রানা/এএএ