দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

প্রধান বিরোধীদল বিহীন এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৫টি আসনেই আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র্র প্রার্থীদের কঠিন লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমানতালে দু‘ভাগে ভাগ হয়ে চালিয়েছেন প্রচারণা। একপক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করতে চালিয়েছেন ব্যক্তিগত আক্রমণও। তবে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার সকালে। এখন ভোটের অপেক্ষা।

গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর- মহানগর আংশিক) এই আসনে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়ী হতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল। প্রচারণা শুরুর পর থেকেই গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাসেলকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তার কর্মীসমর্থক সহ। নির্বাচনী মাঠে রাসেল ভালো একটি অবস্থানও তৈরি করেছেন। 

মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, সব অপপ্রচারের জবাব ভোটাররা এবার দিয়ে তাকে জয়ী করবে এমন প্রত্যাশা তার। অপরদিকে রাসেলও পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে তার বিজয়ী হওয়ার আশা করছেন। 

গাজীপুর-২ আসনে এবার পঞ্চমবারের মতো জয়ী হতে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী লড়ছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা কাজী আলিম উদ্দিন বুুদ্দিন। দলীয় কোন্দলকে কেন্দ্র করে রাসেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও বুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন প্রথম থেকেই। এ দুজনের মধ্যেই জয় পরাজয় নির্ধারিত হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী রাসেল সরকারের উন্নয়ন নিয়ে প্রচারণা চালালেও এলাকার উন্নয়নে বাধাগ্রস্তের অভিযোগ তুলে প্রতিমন্ত্রীকে বয়কটের আহ্বান জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী বুদ্দিন। 

গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-সদর উপজেলার আংশিক) এই আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমানা আলী টুসি। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ স্বতন্ত্র পদে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছে। এ দুজনের মধ্যেই জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে। রুমানা আলী টুসির বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলীর নেওয়া নানা পদক্ষেপ ও সরকারের উন্নয়ন নিয়ে প্রচারণা চালালেও চাঁদাবাজমুক্ত এলাকা গড়ে তোলার জন্য ফের তাকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সবুজ। 

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে চতুর্থবারের মতো জয়ী হতে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীকে লড়ছেন তার ফুফাতো ভাই কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদ। এ দুজনের মধ্যেই জোড় লড়াই হতে পারে। এমপি রিমি এলাকার উন্নয়নে তাকে ফের বিজয়ী করতে আহ্বান জানালেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে না পারার ব্যর্থতা সামনে এনে প্রচারণা চালিয়েছেন।  

গাজীপুর-৫ (কালিগঞ্জ ও মহানগরের আংশিক এলাকা) আসনে চতুর্থবারের মতো জয়ী হতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে সাবেক এমপি ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান। এ দুজনের মধ্যেই জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে। প্রচারণা শুরুর পর এলাকার উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন দুই প্রার্থীই।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, পাঁচটি আসনে ৯৩৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৫৯৫টি কেন্দ্রকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোতে নেওয়া হবে বাড়তি নিরাপত্তা। তবে সবগুলো কেন্দ্রকে নিয়েই আমরা ভাবছি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।

পাঁচটি আসনে ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৩২৭ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ লাখ ১০ হাজার ২৮৩ জন, নারী ভোটার ১৩ লাখ ৪ হাজার ১৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৭ জন। এর মধ্যে গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১৮ ওয়ার্ড) আসনে ২৩৭টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৫১২টি ভোটকক্ষে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৭ জন, নারী ভোটার ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৪ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১১ জন। গাজীপুর-২ (সদর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ থেকে ৩৭ ও ৪৩ থেকে ৫৭ ওয়ার্ড) আসনে ২৭২টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৬৮৯টি ভোটকক্ষে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন ভোটার রয়েছে, এর মধ্যে ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৭০ জন পুরুষ, ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩৪৭ জন্য নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ৯ জন ভোটার রয়েছে। গাজীপুর-৩ (গাজীপুর সদর-শ্রীপুর) আসনে ১৮০টি ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৬৮টি ভোটকক্ষে আসন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪২৭ ভোটার রয়েছে, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৪ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৮ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে ১২২টি ভোটকেন্দ্রের ৬০৪টি ভোটকক্ষে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪৭ ভোটার রয়েছে এর মধ্যে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ জন পুরুষ, ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৬ জন নারী ভোটার রয়েছে। গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ-গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪০ থেকে ৪২ ওয়ার্ড) আসনে ১২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৬৯৫টি ভোটকক্ষে মোট ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৫ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ১০১ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৭২ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন রয়েছে।

শিহাব খান/আরকে