ছেলের কোলে চড়ে ভোট দিয়েছেন খুলনার তেরখাদা আজগড়া গ্রামের শতবর্ষী বৃদ্ধা টুকু বিবি। বার্ধক্যজনিত কারণে বাইরে বের হতে পারেন না। পারেন না নিজের পায়ে চলাফেরা করতে। রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ছেলে রশিদ বিশ্বাসের কোলে চড়ে খুলনা-৪ আসনের তেরখাদা উপজলোর ১নং আর বি আজগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি।

ভোট দিয়ে আপ্লুত শতবর্ষী টুকু বিবি বলেন, ‘ভোট দিছি, ভোট দিয়ে ভালো লাগিছে। আমার মারে ভোট দিছি, হাসিনা মারে ভোট দিছি। মারে ভোট দিছি, কষ্ট হবে কেন।

টুকু বিবির ছেলে রশিদ বিশ্বাস বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে মা অসুস্থ তাই তাকে কোলে নিয়ে ভোট দেওয়াতে নিয়ে এসেছি। মা তো অসুস্থ, মার তো ভোট দিতেই হবে। ভোটের পরিবেশ খুব সুন্দর।

তিনি বলেন, আমাদের ৯ জন ভোটার। মা আর আমরা দুই ভাই ভোট দিয়েছি, বাকি ছয়টা ভোট দিতে পাঠাবো।

রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান (আম), তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা (ডাব), ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান (মিনার), বিএনএম প্রার্থী এস এম আজমল হোসেন (নোঙর), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা (ট্রাক), স্বতন্ত্র প্রার্থী এমডি এহসানুল হক (সোফা), স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম রওশন জামির (কাঁচি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজভী আলম (ঈগল)।

সারাদেশের মতো খুলনার ছয়টি আসনে আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। শীত ও কুয়াশার কারণে সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ভোটার উপস্থিতি। নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে খুশি ভোটাররা।

এবারের নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনে ১১টি রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯ প্রার্থী। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র দুইজন।

এবারের নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ লাখ ৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ জন। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। ভোট কেন্দ্রসহ গোটা জেলাজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রসহ গোটা জেলার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ১৭ হাজার সদস্য। নির্বাচনে জেলা পুলিশের ২ হাজার ১৪২ জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩ হাজার ৮৩ জন, ৯ হাজার ৫৮৮ জন আনসার, র‌্যাবের ৯৬ জন, দাকোপ উপজেলা ও কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে কোস্টগার্ডের ৫৯৬ জন, ১৯ প্লাটুন বিজিবি, সেনাবাহিনীর ৬০০ জন ও নৌ পুলিশের ১৩ জন দায়িত্ব পালন করছেন।

খুলনার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহমেদ জানান, নির্বাচনের দিন ৭৯৩ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৭২০ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৪৪০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনার ছয়টি আসনে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ৯৫৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন।

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর