বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আস‌নে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামলের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দের সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে বগুড়ার সোনাতলার রানীরপাড়া এবং সদর উপজেলার গোকুলে এ ঘটনা ঘটে। এদিন বেলা ১১টার দিকে আসন‌টির সোনাতলা উপজেলার রানিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র প‌রিদর্শনে যান বগুড়া-১ আস‌নের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল। সেখানে গেলে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা তার ওপর চড়াও হন। হামলাকারীরা মোস্তাফিজুর রহমান শ্যামল ও তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের মারধর করে।

এ বিষয়ে শ্যামল বলেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থক যারা রানীরপাড়ার দায়িত্বে আছেন, তারা হামলা করেছেন। আমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। আমার যারা সমর্থক তাদের মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা চাচ্ছেন বাংলাদেশে যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সেক্ষেত্রে যারা এ কাজ করেছে তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

রানীর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সামিউল আলম বলেন, সকাল পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে অবস্থা খারাপ দেখলে আমি মোবাইল টিমকে ফোন করি।

রানীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৩ হাজার ২৫৬ জন। বেলা তিনটা পর্যন্ত এই কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ৬৫০টি।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান শ্যামলের ওপর হামলা হয়েছে এরকম এক‌টি লি‌খিত অভি‌যোগ ওই প্রার্থী আমা‌দের কা‌ছে দি‌য়ে‌ছেন। তার ওপর নৌকা প্রার্থীর লোকজন এ হামলার ঘটনা ঘ‌টি‌য়ে‌ছে। আমরা বিষয়‌টি নি‌য়ে কাজ কর‌ছি।

এদিকে বগুড়া সদর আসনে নিজের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ। এসব নিয়ে তার সমর্থকদের মারধরও করা হয়। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে সদরের গোকুল ইউনিয়নের তছলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, যুবলীগের দায়িত্বশীল এক নেতা আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেননি। অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের থাকতে দেননি। আমি বিষয়টি জেলা রিটানিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে চেয়েছেন। রাকিব নামে আমার এক এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। আরেকজনকে এখনও আটকে রেখেছেন।

এসব অভিযোগ করে তিনটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করার দাবি জানান ট্রাক প্রতীকের এই প্রার্থী।  

বগুড়া সদরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।

তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি আমরা অলরেডি এড্রেস করেছি। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি টিমকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি লোকাল থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এছাড়া আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। যাতে করে আর কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ায় সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি ভোটকেন্দ্রে গুরুত্ব বিবেচনায় নিরাপত্তার জন্য ১২ জন আনসার ও ২ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এছাড়া ১৫০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল টিম, ২২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য, সেনাবাহিনীর ২৮টি পেট্রোল টিম, ৩৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

৭টি আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং স্বতন্ত্রসহ মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার মোট ভোটার ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ ৫ হাজার ৪৬৯ জন এবং নারী ১৪ লাখ ২৫ হাজার ১০৯ জন।

আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/আরকে