নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি আবাসনে বরাদ্দ পাননি সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সরকারি কোয়ার্টারেই বসবাস করছেন তারা। সেই সঙ্গে মূল বেতনের পাশাপাশি নিচ্ছেন বাসাভাড়ার জন্য ভাতা।

জানা গেছে, আবাসনের ভবনে ২৫ কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে বাস করছেন। এছাড়া ডরমিটরির তিনটি কক্ষে আছেন তিনজন। এর মধ্যে মাত্র একজন নিয়মানুযায়ী সরকারিভাবে বরাদ্দ নিয়ে বাস করছেন। বাকিরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে বিনামূল্যে থাকছেন। পাশাপাশি বাসাভাড়ার জন্য ভাতাও নিচ্ছেন তারা।

হাসপাতালের তথ্যমতে, কোয়ার্টারের ছয়টি ভবনে অন্তত ২৬টি পরিবার ভাড়া থাকতে পারবে। এছাড়া কর্মচারীদের জন্য একটি ডরমিটরিতে ৩ থেকে ৬ জন থাকার ধারণক্ষমতা রয়েছে। অথচ কোয়ার্টার ও ডরমিটরিতে থাকা বিভিন্ন পদের ২৫ জনের মধ্যে মাত্র একজন নিয়মানুযায়ী সরকারিভাবে বরাদ্দ নিয়ে বাস করছেন। 
 
যারা বরাদ্দ পায়নি তারা সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরতদের জন্য ৯ হাজার ৭০০ টাকা মূল বেতন হলে ৫০ শতাংশ হারে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ৯ হাজার ৭০১ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ হারে ৪ হাজার ৮০০ টাকা, ১৬ হাজার ১ থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনের ৪০ শতাংশ হারে ৭ হাজার টাকা এবং ৩৫ হাজার ৫০১ টাকা থেকে এর বেশি বেতনের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ হারে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা দিয়ে থাকে সরকার। আর ডরমিটরি বাসার (যৌথ শয়ন কক্ষ) ক্ষেত্রে মূল বেতনের ১০ শতাংশ টাকা হারে বাসাভাড়া দেওয়া হয়। সরকারি বাসা বরাদ্দ নিলে বেতন স্কেল অনুযায়ী বাসা ভাড়া হিসেবে টাকা কাটা হয়।

ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি আবাসনের ৬টি ভবনে দুই ও তিন কক্ষ বিশিষ্ট ২০টি কোয়ার্টারে কর্মকর্তা, নার্স, মেডিকেল সহকারী, টেকনিশিয়ানসহ ২৫ জন পরিবার নিয়ে বাস করছেন। এছাড়া ডরমিটরির তিনটি কক্ষে বসবাস করছেন আরও তিনজন। অথচ অধিকাংশের নামে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেওয়া হয়নি। শুধু ফার্মাসিস্ট আমিনুর রহমান নিজের নামে একটি কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন। কিন্তু বরাদ্দ না নিয়েও কোয়ার্টারে থাকা অন্যরা মূল বেতনের সঙ্গে নির্ধারিত হারে বাসাভাড়া ভাতা পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মচারী জানান, সরকারি আবাসন পরিচালনার জন্য ৫ থেকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি থাকার কথা। কিন্তু এখানে কোনো কমিটি নেই। হাসপাতালের একটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে বিনা ভাড়ায় আবাসনে থাকছে। অনেকেই নামমাত্র ভাড়ায় ডরমিটরি কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে বছরের পর বছর পরিবারসহ মূল আবাসনে বসবাস করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি আবাসনে বিনাভাড়ায় পরিবারসহ বসবাস করছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) কামরুজ্জামান কামাল, মেহেদি হাসান, ময়নুল ইসলাম, সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব ইসলাম, ল্যাব টেকনিশিয়ান কবির, নার্স মৌসুমী আকতার। একই ভাবে ডরমেটরিতে বিনা ভাড়ায় থাকছেন সিনিয়র নার্স মাহমুদা খাতুন মিনি, পারুল আকতার ও মোশাররফা।

ডরমিটরি (যৌথ শোবার ঘর) বরাদ্দ দেখিয়ে পরিবার নিয়ে সরকারি বাসায় থাকা নার্স উম্মে কুলসুম ও জাহেদা খাতুন জানান, প্রতি মাসে তাদের বেতন থেকে ভাড়া বাবদ কাটা হয় ২ হাজার টাকা করে। তবে বেতন স্কেল অনুযায়ী তারা বাসাভাড়া পাচ্ছেন ৭ হাজার টাকা।

বরাদ্দ ছাড়াই আবাসনে থাকা উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান ও মেহেদী হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে দুই বছর ধরে সরকারি বাসায় আছেন বেতন থেকে কোনো ভাড়া কাটে না। তবে তারা প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ কিছু টাকা অফিসের একজনের হাতে জমা দেন।

নার্স মৌসুমী আকতার বলেন, তিনি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মাফিজুল ইসলামের কাছে ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০০ টাকা দেন। তবে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে মাফিজুল বলেন, তার হাতে কেউ ভাড়ার টাকা দেন না।

এদিকে সরকারি আবাসন বরাদ্দ না পেয়ে গত আট মাস ধরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের একটি কক্ষে বসবাস করছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকারিয়া জালাল। তিনি বলেন, যোগদানের পর সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামানকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও বরাদ্দ পাইনি, তাই কার্যালয়ে থাকছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, আপনাকে কোনো সময় দিতে পারব না। আপনি কার অনুমতি নিয়ে আমার অফিস এসেছেন আর হাসপাতালের কোয়ার্টারে কেন গেছেন?

যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন হাসিবুর রহমান বলেন, বিনাভাড়ায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ বিনাভাড়ায় থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরকে