পৌষের শেষ বেলায় রংপুরে ঘন কুয়াশা কমলেও বেড়েছে হিম বাতাসের দাপট। গরম কাপড়েও থামছে না শরীরের কাঁপুনি। এ যেন হিম শীতল বাতাসের তোড়ে শীত জাপটে ধরেছে শরীরজুড়ে। এ পরিস্থিতিতে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষজন কাজে বের হলেও প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে রয়েছেন তারা।

বিশেষ করে তিস্তা নদীবেষ্টিত এলাকায় হাঁড় কাঁপানো শীতের প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। এসব শীতার্ত মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছে রংপুর জেলা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের গংগাচড়া মডেল থানায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে তিন শতাধিক শীতার্ত ও দুস্থ-অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।

রংপুরের জেলা পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) এস এম রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মোহাম্মদ আবু রায়হান, সহকারী পুলিশ সুপার (স্টাফ অফিসার টু ডিআইজি) রাফে সামদান হুসাইন মো আদেল, গংগাচড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুমুর রহমান প্রমুখ।

এদিকে শীতবস্ত্র পেয়ে নাজির হোসেন নামের এক বৃদ্ধ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাবারে কয়দিন থাকি জারোতে শরীর কোনা সোরপোটা নাগছে। আজই কম্বল কোনা প্যায়া মোর ভালোয় হইল। আইতোত জার কম নাগবে।’

কৃষক মহুবার মিয়া ও আব্দুল জব্বার জানান, গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডার চোট বেড়েছে। বিশেষ গত দুদিন ধরে কনকনে শীতল বাতাসে তাদের মতো বয়স্ক মানুষরা খুব কষ্টে আছে। এখন এই কম্বল পাওয়ায় কিছুটা শীত নিবারণ করা যাবে।

তিস্তা-ঘাঘট-যমুনেশ্বরী-করতোয়াসহ অসংখ্য নদ-নদীতে বিস্তৃত এ জেলার চরের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করে। তবে গত কয়েক দিনের কনকনে শীত আর ঠান্ডায় চরের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছে বিপাকে। শীতের দাপটে অনেকের চাষাবাদেও ব্যাঘাত ঘটছে। অভাবী মানুষজন প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্ট পাচ্ছে। তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৫, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ২, রংপুর এবং নীলফামারীর ডিমলায় ১৩ ডিগ্রি ও গাইবান্ধায় ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত কুয়াশা কেটে গেলে শীত বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানান ওই আবহাওয়াবিদ।

রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য ৫৮ হাজার ২৫০টি কম্বল বিতরণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তিস্তার চরসহ বিভিন্ন এলাকায় কম্বল বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ