ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র এবং টানা চারবারের এমপি থেকে এবার তৃতীয়বারের মতো পূর্ণ মন্ত্রী হলেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। ১৯৭৩ সাল থেকে ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে তিনি টানা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। তিনি এবারও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ২০১৪ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ্ মন্ডল বলেন, আ.ক.ম মোজাম্মেল হককে নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে উনি একজন ভালো মানুষ, সৎ মানুষ। একজন স্বচ্ছ, কর্মঠ রাজনীতিবিদ। সারা জীবনই ওনি কর্মের মধ্যে জীবন কাটিয়েছেন এবং বিভিন্ন পদে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। পূর্ণাঙ্গ সফলতায় পূর্ণ উনার জীবন।

তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম মোজাম্মেল হক দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে জয়দেবপুর ইউনিয়ন গাজীপুর পৌরসভায় উন্নীত হলে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা ২০০৮ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে গাজীপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। একই আসন থেকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। 

আতাউল্লাহ্ মন্ডল বলেন, আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যেতাম তখন তার (আ.ক.ম মোজাম্মেল হক) সাথেই যেতাম। বঙ্গবন্ধু তাকে যে মূল্যায়ন করতেন সে হিসেবে তিনি জাতীয় নেতা হওয়ার কথা। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্থানীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন। তখন জয়দেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান তাকে ডেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়ার কথা জানান। তাৎক্ষণিভাবে তিনি জিয়াউর রহমানের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে এরশাদ ক্ষমতায় আসলে তিনি গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জিয়াউর রহমানের মতো এরশাদও তাকে ডেকে তার দলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি তাৎক্ষণিভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এক কথায় তার কর্মের জন্যই দল তাকে মূল্যায়ন করেছে।

এদিকে তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের নির্বাচনী এলাকায় বইছে আনন্দ- উচ্ছ্বাস। কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি থেকে টানা তৃতীয় বারের মতো মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তার এ অগ্রযাত্রায় আমরা বেশ আনন্দিত। তিনি এলাকায়  শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিল্প সমৃদ্ধ এ আসনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য তার ভূমিকা রয়েছে।

কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন সিকদার, তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার খবরে পুরো উপজেলার নেতাকর্মীরা আনন্দ উল্লাসে মেতেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। টানা তৃতীয় বারের মতো পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার খবরে আমরা বেশ আনন্দিত। 

আ.ক.ম মোজাম্মেল হক ছাত্র অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সহ-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তৎকালীন গাজীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ৩ বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৪ বার পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন।

শিহাব খান/আরএআর