বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুনক্ষেত্র সৃষ্টি করে রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। তবে হরতাল-অবরোধে বিপর্যস্ত এসব কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। আবার অধিকাংশ সময়ই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৩০ শতাংশ মানুষ কাঁকড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই কাঁকড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি, অন্যদিকে টানা হরতাল-অবরোধ যেন তাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো কাঁকড়া বিক্রি করতে না পারায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন তারা।

মহিউদ্দিন মুরাদ নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৬ সাল থেকে এই কাঁকড়া ধরা ও চাষের সঙ্গে যুক্ত হই। প্রথমদিকে নোয়াখালীর মধ্যেই কাঁকড়া বিক্রি করতাম। এখন রাজধানী হয়ে দেশের বাইরে পাঠাচ্ছি। তার মধ্যে চায়না-সিঙ্গাপুর-হংকং অন্যতম। তবে কিছুদিন আগের হরতাল-অবরোধে আমরা বিপর্যস্ত। বেশি দামে গাড়ি ভাড়া করে পাঠাতে হয় কিন্তু দাম পাই কম। প্রতি কেজিতে ২০০/৩০০ টাকা লস। আর কোনো ব্যবসা পারিনা বলে এই ব্যবসা থেকে বের হতে পারছি না।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিঝুমদ্বীপে মাছের পাশাপাশি ৩০ শতাংশ মানুষ কাঁকড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ৩০/৩৫ জন বড় কাঁকড়া ব্যবসায়ী আছে। আজকে তিনটা বছর আমরা লোকসানের মধ্যে আছি। এখন হরতাল অবরোধে হুমকির মুখে এই ব্যবসা। আমরা ৩০০-৫০০ টাকায় কাঁকড়া কিনে বিক্রি করতে হয় ১০০/১৫০ টাকায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন যদি সরাসরি কাঁকড়া প্রেরণ করা যেতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। 

ওমর ফারুক নামের এক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা মহামারীর পর থেকে কাঁকড়া থেকে লাভ হয় না। জোয়ার আসলে পানিতে হ্যাচারি ডুবে যায় ফলে কাঁকড়া ভেসে চায়। হরতাল অবরোধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী যথাসময়ে কাঁকড়া পাঠাতে পারছেনা। কাঁকড়া মরে যায়। মালিক আমাদের বেতন দিতে পারছে না।

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় হুমকির মুখে কাঁকড়া ব্যবসা। সরকার যদি একটু নজর দিতো তাহলে ব্যবসা টা টিকে থাকতো। আমরা বহু লোকসানের মধ্যে আছি। আগামী দিনে কাঁকড়া পাঠাব এখানেও লোকসান দিতে হবে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারি না। অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে বেতন দিতে হয়। 

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাজু চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঁকড়া চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। কারণ কাঁকড়া একটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য। চীন, আমেরিকাসহ ইউরোপে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সঠিকভাবে চাষ করে রপ্তানি করতে পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হবে। নিঝুমদ্বীপসহ হাতিয়ায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কাঁকড়া চাষিদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা যায় কিনা তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাঁকড়া শিল্পের বিকাশ হয়েছে হাতিয়াতে। মাছের পাশাপাশি কাঁকড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কাঁকড়া বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে মৎস্য বিভাগ কাজ করছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ব্যবসার প্রসারে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে। আমরা আশা করছি এই শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করবে। ফলে অর্থনীতিতে যেমন ভূমিকা রাখবে ঠিক তেমনি জেলেদের জীবনমান উন্নত হবে।

হাসিব আল আমিন/আরকে