হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইলের মেলায় এবার সবচেয়ে বড় মাছটি তুলেছেন বাহুবল উপজেলার কবিরপুর গ্রামের আব্দুল খালেক। ৫০ কেজি ওজনের এই বিশাল মাছটির দাম চেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আব্দুল খালেক মেলার জন্য সুনামগঞ্জ থেকে মাছটি নিয়ে এসেছেন। তবে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে বাঘাইড়টি বিক্রি করা নিয়ে চিন্তিত এই মাছ বিক্রেতা। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাত ৭টা পর্যন্ত মাছটি অবিক্রিত ছিল।

২০৬ বছর ধরে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মেলা। এই মেলা মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও এটি স্থানীয়দের কাছে মিলনমেলা হয়ে ওঠেছে। 

দুই দিনব্যাপী মেলার আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শেষ দিন। মূলত একদিনই আয়োজন হতো পইলের মেলা। কিন্তু জনপ্রিয়তার জন্য মেলাকে বর্তমানে দুইদিনে গড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা আয়োজন কমিটির উপদেষ্টা মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি জানান, এবার প্রায় ৩শ মৎস্য বিক্রেতা মেলায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে প্রায় সহস্রাধিক বড়-ছোট ব্যবসায়ী অংশ নিয়েছেন এই মেলায়।

সোমবার পইলের মেলা ঘুরে দেখা যায়, আব্দুল খালেকের বড় বাঘাইড় মাছটির পর সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সদর উপজেলার লামাপইত গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার দুটি বোয়াল মাছ। একটির দাম ২৬ হাজার ও আরেকটির দাম ৩০ হাজার টাকা। তিনি দুটি বোয়াল মাছ মৌলভীবাজারের শেরপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
   
শাহজাহান মিয়া নামে অপর আরেক বিক্রেতা জানান, তিনি ২৬ কেজি ওজনের একটি কাতলসহ বেশ বড় বড় মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন। বড় কাতলটির দাম তিনি চাইছেন ৬০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা পেলে তিনি সেটি বিক্রি করে দেবেন। জিলু মিয়া নামে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, এখনও কেনা বেচা তেমন হয়নি তবে রাতের বেলায় বাড়বে।

এছাড়াও বাঘাইড়, রুই, কাতল, চিতল, গজার, গ্রাস কার্প, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পোয়া, টেংরা, পুটি, শিং, কই, শোল, বাইম, চাপিলা, চান্দা, কাকিয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। মাছ ছাড়াও মেলায় কৃষি, গৃহস্থালি, ভোগ্যপণ্য, আখ ও শিশুদের খেলনা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই মেলায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হয়েছে। এ মেলাকে নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে ধারণ করেন পইল গ্রামসহ এর আশপাশের লোকজন।
 
রেজাউল ইসলাম নামে মেলায় ঘুরতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, প্রতি বছরই আমরা এই মেলার জন্য অপেক্ষা করি। তবে এবার মাছের দাম অন্যবারের চেয়ে বেশি। যে কারণে অনেক মাছ অবিক্রিত থেকে যেতে পারে।

রুবেল আহমেদ নামে স্থানীয় এক তরুণ বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা এ মেলার জন্য অপেক্ষা করি। এই মেলাকে ঘিরে আমাদের এলাকায় উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজন এই এলাকায় আসে। এটি আমাদের ঐতিহ্য। 

পইল গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ফুটবলার শেখ মহরম আলী বলেন, এই মেলা মানেই মিলনমেলা। এ মেলা ঐতিহাসিক। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে বড় বড় মাছ আসে। এলাকাবাসী এই মেলায় আনন্দ করেন। এই উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। যে কারণে এই কয়দিন আমরা আনন্দের সঙ্গে কাটাই। 

পইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈনুল হক আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পইল মাছের মেলা আমাদের জন্য ঐতিহ্যের একটি মেলা। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আজহারুল মুরাদ/এমএএস