ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পর পর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন বলেছেন, আমি তো সব মিটিংয়ে বইলাই আসছি, প্রধানমন্ত্রী নৌকা ওনাকে (কাজী জাফর উল্যাহ) দিছে বইঠা আমাকে দিছে। এহন আপনারা বিশ্বাস করছেন? বৈঠা না দিলে কী গাঙ পাড়ি দিতে পারতাম?

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সমাবেশের আয়োজন করা হয় ফরিদপুরের সদরপুরের ঢেউখালি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক ব্যাপারীর বাড়িতে। সেই সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই তার প্রথম সমাবেশ।

নিক্সন চৌধুরী বলেন, এবার যেই বিজয়টা আসছে সেটা কিন্তু উন্নয়নের বিজয়। সেটা মূল্যায়নের বিজয়। একটা রাজনৈতিক নেতার একটা অধ্যায়। তিন তিন বার পরাজিত হওয়ার পর এই অধ্যায় শেষ। 

কাজী জাফর উল্যাহর নাম উল্লেখ না করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, যে ব্যক্তি চইলা গেছে আপনারা সবাই দোয়া করবেন, তার জন্য আমিও দোয়া করি। 

নিক্সন চৌধুরী বলেন, যদি উনি (কাজী জাফর উল্যাহ) ভালো কাজ করতো তাহলে এই দিন ওনার দেখতে হইতো না। যদি মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিস্যু দিয়া না মুছতো তাইলে কিন্তু এই দিন দেখতে হইত না। তারপরেও উনি শেষবার কাইন্দা কাইটা মাফ চাইছে। আপনারা পারলে ওনারে মাফ কইরা দিয়েন। আমি ওনার ভাইস্তা (ভাতিজা) হিসেবে ওনার পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি। লোকটার ৩০ বছরের অন্যায় আপনারা মাফ করে দিয়েন। আগামীতে ইনশাআল্লাহ বঙ্গবন্ধুর নৌকার জোয়ার এই তিন থানা থেকে শুরু হবে। এখন আমাদের নতুন আঙ্গিকে আগাইতে হবে। আমাদের বাকি যে কাজগুলো আছে সেগুলো করতে হবে, আমাদের নতুন কইরা কাজ শুরু করতে হবে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নিক্সন চৌধুরী বলেন, এই আসনের নির্বাচন সারা বাংলাদেশের একটা মডেল নির্বাচন, সারা বাংলাদেশ তাকায় ছিল আপনাদের দিকে। আগেরবার (২০১৮) আমি ভোট পাইছিলাম ১ লাখ ৪৩ হাজার। এবার আপনারা ভোট দিছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার। 

নিক্সন চৌধুরী বলেন, আমাদের সমস্যা কাদের সঙ্গে? কিছু দস্যু, বনদস্যু। যারা এই আওয়ামী লীগটাকে নষ্ট করছে। আমাদের সমস্যা এই টাউট বাটপার খুনিদের বিপক্ষে। যারা নৌকায় ভোট দিছে, আমি মনে করি সব ভোট আমি পাইছি। নৌকার ভোট আমার ভোট। সেখানে কোনো বিভক্তি নেই। কিন্তু দুই চারটা দালাল এদের বিচার হবে। এরা আওয়ামী লীগকে বাঁচায়া রাখে না এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে। 

তিনি বলেন, আমি পরশুদিন প্রধানমন্ত্রীকে বলে আসছি নিজে, আমি নুরুল্লাহগঞ্জে এক দোকানে ঢুকছি এক মুরুব্বি সে আমার মাথা হাতাইয়া দোয়া কইরা দিছে, চা খাওয়াইছে, সে আমারে বুকে জড়ায় ধরছে। আমি তার চায়ের বিল দিছি। যাওয়ার সময় জড়াইয়া ধরা কয়, 'বাজান তোমারে এত ভালোবাসি কিন্তু ভোটটা নৌকায় দেব।' এরকম মানুষ আছে এখনো বাংলাদেশে। আমরা তাদেরকে স্যালুট করি। তাদের কোনো দোষ নেই। দোষ হইল ওই ডাকাতদের। এরা সমাজটাকে নষ্ট করে, এরা চাঁদাবাজি করে, ডাকাতি করে, এরা খুনখারাবি করে দোষ হয় আওয়ামী লীগের।

নিক্সন তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বলছি, যারা নৌকায় ভোট দিছে তাদের গিয়ে বলবেন, এমপি সাহেবের দরজা আপনাদের জন্য খোলা। নৌকার সাথে আমাদের বিরোধ নেই। আমাদের বিরোধ ছিল যাকে বারবার নৌকা দিত। ওই ব্যক্তি এই তিন থানায় গত ৪০ বছরে কোনো কাজ করেন নাই। আমরা সেই ব্যক্তির বিপক্ষ। আমরা নৌকার বিপক্ষে না। 

এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহেদীদ গামাল, সদরপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর কাজী, ঘারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনসুর মুন্সী প্রমুখ।

জহির হোসেন/আরকে