এখানে ইফতার করতে কোনো টাকা লাগে না

রোববার (১৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টা। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তা। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়তেই ঘরে ফেরা মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। মুখরোচক ও পুষ্টিকর ইফতার সামগ্রী এবং দৈনন্দিন জিনিসপত্র কেনায় ব্যস্ত মানুষগুলো করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এসেছেন বাজারে। 

ব্যস্ত মানুষগুলোর ভিড়ে কিছু মানুষ রাস্তার পাশে বসে রয়েছেন। তাদের ঘর নেই, ঘর থাকলেও স্বজন নেই। তাই ইফতারে ঘরে ফেরার তাড়া নেই। আবার যার ঘর আছে, স্বজন আছে। কিন্তু ভালো ইফতার আয়োজনের সামর্থ্য নেই। একটু ভালো ইফতারের আশায় বসে আছেন তারা। 

চৌরাস্তায় মহাসড়কের পাশের একটি ভবনের সামনে চেয়ার সাজিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন যুবক। চেয়ারগুলোতে একে একে বসছেন স্বল্পআয়ের মানুষ। এছাড়া বসেছেন মহাসড়কের দূরপাল্লার কয়েকজন যাত্রী। তাদের সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় ইফতার।

সারাদিন মাওনা চৌরাস্তায় ফেরি করে মাল বিক্রি করেন রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, লকডাউনে আয় কমে গেছে। ভালো মানের খাবার দিয়ে ইফতারের ইচ্ছা থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে সম্ভব হয়ে উঠে না। রোজা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন এখান থেকে নেওয়া খাবার দিয়ে ইফতার করি। ইফতারের আগ মুহূর্তে ৫০-৬০ জনের জন্য চেয়ার বসানো হয়। পর্যায়ক্রমে রোজাদাররা প্রতিটি চেয়ারে বসে ইফতার করেন।

চেয়ারগুলোতে একে একে বসেছেন স্বল্পআয়ের মানুষ

রিকশাচালক কলিম উদ্দিন বলেন, এক কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিনই ইফতারে করতে আসি। এখানে ইফতার করতে কোনো টাকা লাগে না। ফ্রিতে ইফতার খাওয়ানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিন পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন হতদরিদ্রদের কথা চিন্তা করে রমজান মাসজুড়ে প্রতিদিন ৭০ জনের ইফতারের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিজনের ইফতারে রয়েছে খেজুর, খিচুড়ি, সিদ্ধ ডিম ও এক বোতল পানি। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন আইটেম দেওয়া হয়। বিশেষ দিনগুলোতে উন্নতমানের খাবার দেওয়া হবে।

জাহিদুল আলম রবিন বলেন, সবাই যখন ইফতার নিতে ব্যস্ত তখন কিছু মানুষ বিভিন্ন দোকানপাটে ঘোরাঘুরি করে ইফতার সংগ্রহ করতেন। গত বছর লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ইফতারে তাদের খুব কষ্ট করতে দেখেছি। আমি এদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ডেকে তাদের কথা শুনি। তাদের কষ্টের কথাগুলো আমাকে খুব কষ্ট দেয়। তাই আমি সাধারণ মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছি। দৈনিক এখানে ৭০-৮০ জন মানুষ ইফতার করেন। বিশেষ দিনগুলোতে কখনো ১০০ জন ইফতার করেন।

শিহাব খান/এএম