‘সরকারি গুদামে ধান দিলে আমাগো লস। খোলা বাজারে বেচলে মণপ্রতি এক-দ্যারশো টাহা বেশি পাই। ফাও লস কইরা লাভ কি?’ কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের মনির হোসেন। তার প্রধান পেশা কৃষিকাজ। কয়েক বছর সরকার নির্ধারিত দামে খাদ্য গুদামে ধান-চাল দিয়েছেন। কিন্তু এখন আগ্রহ নেই তার।

আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হতে বাকি মাত্র ৪৪ দিন। অথচ এখনো ২৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি সরকারের খাদ্য গুদামগুলো। ফলে নির্ধারিত সময়ে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

আমন মৌসুমে বিভাগে ৪৪ টাকা কেজি দরে চাল আর ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে সরকার। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে শেষ হবে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি। বিভাগে ৭১টি সরকারি খাদ্য গুদামের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

কিন্তু জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি এসেও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ভোলার একটি খাদ্যগুদামে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার ৬২৯ মট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান। 
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মিল মালিক সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

মিল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানিয়েছেন, খোলা বাজার থেকে গুদাম পূর্ণ করা হলে দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু চুক্তিবদ্ধ মিলগুলো কখনোই এত দ্রুত সময়ে ধান-চাল দিতে পারবে না।

বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকার ইউনুস বেপারী বলেন, সাহেবের হাটে একটি রাইস মিল আছে। ওরা খাদ্য গুদামে চাল দিতো। ৪/৫ বছর আগে কৃষকদের কাছ থেকে কিনতো। এখন আর কিনতে দেখি না। সম্ভবত বাজার থেকে ধান কিনে তা ছেটে চাল করে গুদামে দিয়ে দেয়। এতে কৃষকের কোনো লাভ হয় না।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জন বলেন, গুদামে চাল দিলে মণপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা কম পাই। পাশাপাশি ভোগান্তিতো রয়েছেই।

বিভাগীয় চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার মাহমুদ নিয়াজ বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে চালের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এজন্য এ বছর সময় প্রায় শেষ হয়ে গেলেও চাল দিতে পারছেন না মিল মালিকরা। উচ্চমূল্যের বাজারে মিলগুলো বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, যে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বেশিরভাগই অটোরাইস মিলের চাল সরবরাহকারী। অধিকাংশ রাইস মিলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা সরকার-নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করতে পারছেন। তবে এই সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে মিলারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর