পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর আমদানিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বন্দরটিতে প্রায় দুই মাস ধরে ডলার সংকটের কারণে নতুন এলসি (ঋণপত্র) না পাওয়ায় পাথর আমদানি কমেছে বলে জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে চারদেশীয় স্থলবন্দর (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান) বাংলাবান্ধা ঘুরে দেখা যায়, পাথর আমদানি কমে যাওয়ায় স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য নেই। স্থলবন্দরের ইয়ার্ডগুলোও অনেকটা ফাঁকা। যা বিগত সময়ে ইয়ার্ডগুলো ভরে যেত পাথর আমদানি করা ট্রাকের কারণে। স্থবিরতার কারণে বন্দরের শ্রমিকদেরও কর্মহীন অলস সময় পার করতে দেখা যায়। 

শ্রমিকরা বলছেন, পাথর কম আসায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। এ সমস্যাটা দ্রুত নিরসন চান তারা। 

এদিকে গড়ে প্রতিদিন ১৬০-২০০ ট্রাক পাথর আমদানি হচ্ছে বলে বন্দর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সূত্রে জানা যায়, পাথরনির্ভর এ স্থলবন্দরটি নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও ডলার সংকটের কারণে পাথর আমদানিতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। আগের থেকে অনেক কম আমদানি হচ্ছে পাথর। যেসব ব্যবসায়ীদের এলসি ছিল তারাই আমদানি করতে পারছেন। ডলার সংকটের কারণে নতুন এলসি না পাওয়ার কারণেই বন্দরটিতে পাথর আমদানি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এতে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমায় বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত শ্রমিক।

বন্দরের শ্রমিক নেতা ইদ্রিস আলী জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি পাথর নির্ভর। বেশির ভাগ পণ্য হিসেবে পাথরই আমদানি হয়ে থাকে। এই স্থলবন্দরের কমপক্ষে ১০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে সংসার চালান। লোড-আনলোড শ্রমিকরা বন্দরে গাড়ি ঠিকমতো না আসায় খুব দুর্ভোগে পড়েছেন। একদিন বন্দরে কাজ হলে পরের দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ গাড়ি না আসায় দুদিনই কাজ পান না তারা। লোড-আনলোড শ্রমিক ছাড়াও পাথর ভাঙার কাজ করেন হাজার হাজার শ্রমিক। পাথর না আসায় তারাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তাই সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডলার সংকটের কারণে বন্দরটিতে পাথর আমদানি কমে গেছে। যাদের আগের এলসি ছিল তারাই পাথর আমদানি করতে পারছেন। গত মাসে আমাদের আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনসহ ডলার সংকটে নতুন এলসি না হওয়ায় তা কিছুটা কমে এসেছে। নতুন করে এলসি দেওয়া শুরু হলে আবার পূর্বের অবস্থায় আমদানি শুরু হবে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের প্রায় দুই মাস ধরে পাথর আমদানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ডলার সংকট। ডলারের কারণে এলসিতে পারমিশন মিলছে না। এ কারণেই স্থগিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের পাথর আমদানি। আশা করছি নতুন আঙ্গিকে সরকার গঠন করার পরে ডলার সংকটটা যদি নিরসন ঘটে তাহলে নতুন করে এলসি দেওয়া শুরু হবে। এতে প্রাণ ফিরে পাবে বন্দরটি।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও আগের তুলনায় কিছুটা পাথর আমদানি কমে গেছে। বিশেষ করে এখন গড়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য আমদানি এবং ২০ থেকে ৩০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে বেশির ভাগ পাথরই আমদানি হচ্ছে। পাথরের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় আমদানি কমেছে। এর কারণ হচ্ছে ডলার সংকট। যেহেতু দেশে সাধারণ নির্বাচন ছিল। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আশা করছি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি কমে যাওয়ার যে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে, তা নিরসন হয়ে আগের মতো পাথর আমদানিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে। 

এসকে দোয়েল/আরএআর