দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেঁকে বসা কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, এ সময়ে বাড়তি যত্ন ও নিয়মিত বালাইনাশক স্প্রে করলে সমস্যা প্রকট হওয়ার কথা না। 

জেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে একের পর এক বোরোর বীজতলা। এরই মধ্যে অনেক এলাকায় বীজতলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বীজতলায় আবার চারার গোড়া এবং পাতা পচে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকেও ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

জেলার চিরিরবন্দর ভিয়াইল গ্রামের কৃষক হোসাইন আলী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে আদর্শ বীজতলা তৈরি করেও বোর ধানের  চারা হলুদ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাতের বেলায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছি। তারপরও শীত ও ঘন কুয়াশা কারণে বীজতলা কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।

দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক ছবিউল ইসলাম বলেন, শীত ঘুনকুয়াশায় আর আকাশে সূর্য দেখা না মেলায় বোর ধানের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক স্প্রে করেও সুফল মিলছে না।

জেলার বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের কৃষক মো. মতিউর রহমান বলেন, বোরো ধানের বীজতলা হলুদ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আলু খেতে মড়ক ধরেছে। বালাইনাশক স্প্রে করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। টমেটোর গাছও মরে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে শীতের যে তীব্রতা, তাতে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এদিকে বোর ধানের বীজতলায় সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেও কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ফসলের পরিচর্যা করতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এবার কৃষিতে খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হব।

কৃষক জুয়েল রানা বলেন, গত কয়েকদিনের শৈত্য প্রবাহ ও ঘন  কুয়াশার কারণে ধানের চারা হলুদ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাতের বেলায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখছছি তাতেও রক্ষা করা যাচ্ছে না । শীত ও ঘন কুয়াশা যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে বীজতলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

চিরিবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার জোহরা সুলতানা বলেন, টানা শৈত্য প্রবাহ অতিরিক্ত ঠান্ডা আর ঘনকুয়াশার কারনে বীজতলা হলুদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তার কৃষকদের সঠিকভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন আশা করছি বোরো ধানের বীজতলা খুব বেশি ক্ষতি হবে না। আর শৈত্যপ্রবাহ হবার সম্ভবনা নেই। কৃষকরা বোরো ধান লাগানোর জন্য জমি তৈরি করছে দ্রুত চারা রোপণ হলে আর সমস্যা হবে না।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, বীজতলা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় এবার এক লাখ ৭৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য বীজতলা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫৭৯ হেক্টর জমিতে।

ইমরান আলী সোহাগ/আরকে