ইনসেটে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম লিটন

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন এর আগেও অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাকে দ্রুত খুঁজে বের করে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

শহিদুল ইসলাম লিটন উপজেলার আলগী বাজার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের উদ্যোক্তা। তিনি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত রোববার (২১ জানুয়ারি) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লিটনের উধাও হওয়ার খবর জানাজানি হয়। হারানো টাকা ফিরে পেতে বার বার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যালয়ে আসছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। জীবনের শেষ সঞ্চয় হারিয়ে অনেকেই কাঁদছেন। 

এদিকে শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ওই এরিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫) বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাপে আব্দুল কাইয়ুম আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। 

আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রায়পুরার ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) তার অধীনে ছিল।

তবে এসব ঘটনার কোনোটাতে এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন রায়পুরা থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মীর মাহাবুবুর রহমান। 

তবে গোপন একটি সূত্র বলছে- টাকা নিয়ে উধাও হওয়া শহিদুল ইসলাম লিটনকে ধরতে ছায়া তদন্তে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

শহিদুল ইসলাম লিটনের ব্যাপারে জানতে তার নিজ এলাকা উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, আব্দুল করিম মাস্টারের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিয়া খানমের বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম লিটন। রুবিয়া খানম রাধানগর ইউনিয়নের ৭, ৮, ও ৯ নং ওয়ার্ডের দুই বারের ইউপি সদস্য ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। তার ছেলে শহিদুল ইসলাম লিটন এর আগেও ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে চেষ্টার ফলে সেটি মীমাংসা হয়। 

সরেজমিনে শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়িতে গেলে লিটন ও তার ছোট ভাই লিপু দুজনের ঘরেই তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। বাড়ির পার্শ্ববর্তী লোকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, সপ্তাহ খানেক আগে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে স্ত্রী, মা, ভাই ও সন্তানসহ চলে যান লিটন। তারপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ কেউ করতে পারেনি। তবে আত্মহত্যার দু-একদিন আগে লিটনের খোঁজ নিতে তার বাড়িতে আসেন রায়পুরা উপজেলা এরিয়া সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম। আব্দুল কাইয়ুমের ছবি দেখে এমনটাই নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা। তাদের ধারণা- খোঁজ নিতে এসে তাকে না পেয়ে কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিটনের তিন স্ত্রী রয়েছে। এক স্ত্রী ঢাকার বাসায়, আরেক স্ত্রী নরসিংদী সদরের বাসায়, আরেকজনকে নিয়ে নিজ গ্রাম লক্ষ্মীপুরে থাকতেন লিটন। 

রাধানগর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মনিরুজ্জামান ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, শহিদুল ইসলাম লিটন এক সময় বিজিবিতে চাকরি করতেন। সেখান থেকে কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় যান। সেখানে বড় ধরনের প্রতারণা করে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। এখন আবার তিনি আলগী বাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকদের অনেক টাকা নিয়ে পলাতক। তার এই কেলেঙ্কারির জন্য নাকি একজন নিরপরাধ মানুষ আত্মহত্যা করেছে এমনটাও শুনেছি। লিটন বিভিন্ন সময় ২-৩টা বিয়েসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। আমি মেম্বার হিসেবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে মানুষের এতো পরিশ্রমের টাকা আইনি সহায়তায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) আফসান আল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে ভুক্তভোগী কিছু গ্রাহক অগোছালোভাবে কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আমরা তাদের বলেছি সুন্দরভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করতে। আমরা ব্যবস্থা নেব। এছাড়াও যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের সকলেরই ফোন বন্ধ পেয়েছি। এছাড়া আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি। তারা মামলা করতে চাইলে আমরা সেটি নেব এবং অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তন্ময় সাহা/আরএআর