বরগুনার আমতলী উপজেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মা-বাবাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে জাহিদ (২০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় তারা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে সাতজনকে অভিযুক্ত করে আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে এ ঘটনায় আমতলী থানায় লিখিত অভিযোগের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন আমতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত জাহিদ ও মেয়েটির পরিবার একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করেন। স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে মেয়েটি। স্কুলে যাওয়া আসার পথে জাহিদ তাকে উত্ত্যক্ত করতেন। গত বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাহিদসহ কয়েকজন মেয়েটির বাড়িতে এসে তার বাবা ও চাচাতো পিটিয়ে আহত করেন। এছাড়া তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা মায়ের পেটে লাথি দিয়ে তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তিন মাস আগে ফুঁসলিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে জাহিদ তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় ওই ছাত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় বলেও উল্লেখ করা হয় লিখিত অভিযোগে।

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর শাহরিয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভর্তির সময়ে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের আঘাতের বিষয় লিখে রেখেছেন। পুলিশ যদি এ বিষয়ে সার্টিফিকেট চায় তখন তা নিতে পারবেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন কিছুটা সুস্থ হওয়ায় তারা চাচ্ছেন বাড়িতে চলে যাবেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলে যাওয়ার সময় আমার মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করে। পরে আমার মেয়ে এ ঘটনা আমাকে জানালে আমি ওই ছেলের সাথে দেখা করি। এ সময় উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সাথে ওই ছেলে রাগ দেখায়। পরে আমি তাকে দু-একটি চড়থাপ্পড় দিয়ে আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। এরপর ওইদিনই সন্ধ্যায় তারা আমাদের বাড়িতে এসে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে। 

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলে, তিন মাস আগে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে আমার বাবা-মা আমাকে খুঁজে বের করে বাসায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্কুলে যাওয়া আসার পথে আমাকে উত্ত্যক্ত করে। এছাড়া আমার স্কুলের বান্ধবীদের মাধ্যমে আমি কেন তার সঙ্গে কথা বলি না তা জানতে খবর পাঠায়। পরবর্তীতে স্কুলে যাওয়ার সময় আমার হাত ধরে টানাটানি করলে আমার বাবাকে জানাই। আমার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা যাতে আর কারও সাথে না ঘটে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের সঠিক বিচার চাই।

এ বিষয়ে আমতলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমারা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতোমধ্যে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ইভটিজিংয়ের বিষয়টি আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকায় পারিবারিক মনোমালিন্যের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও আমরা যে অভিযোগ পেয়েছি তার সত্যতা যাচাইপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আরএআর