ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন
মেয়র টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে এমপির সমর্থনের আশায় কয়েক প্রার্থী
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র হয়েছিলেন মো. ইকরামুল হক টিটু। তবে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে তাকে। কেননা, গত সংসদ নির্বাচনে সৃষ্ট বিভেদকে কাজে লাগিয়ে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার আশায় আছেন একাধিক প্রার্থী।
বর্তমান মেয়র ইকরামুল হক টিটু পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টানা ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এক্ষেত্রে নগরের উন্নয়নের পাশাপাশি সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সখ্য, বিনয়ী মনোভাব, সবার ডাকে ছুটে যাওয়া, বিপদে পাশে থাকা- এসব নানা গুণাবলীর কারণে মেয়র টিটুর রয়েছে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। আর আলোচনায় থাকা অন্য প্রার্থীরা এবারই প্রথম নামছেন ভোটের মাঠে।
বিজ্ঞাপন
এ নির্বাচনে প্রার্থী উন্মুক্ত রাখায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটারদের মাঝে জাতীয় নির্বাচনের মতোই আমেজ দেখা যাচ্ছে। মহানগর আ.লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র টিটুর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত আরও তিন নেতা ভোটে লড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। তবে শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে হবেন- এ নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্তর বিপরীতে নির্বাচন করেছেন সিটি মেয়রের বড় ভাই আমিনুল হক শামীম। এতে ফের দুই পরিবারের বিভেদ প্রকাশ্যে আসে। সৃষ্ট এই বিভেদকে কাজে লাগিয়ে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর সমর্থন নিয়ে মেয়র টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার আশায় আছেন একাধিক দলীয় প্রার্থী।
বিজ্ঞাপন
তালিকায় রয়েছেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু, মহানগর আ.লীগের সহ-সভাপতি গোলাম ফেরদৌস জিলু এবং সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট ফারামার্জ আল নূর রাজীব।
তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাব সিটি নির্বাচনে পড়বে না বলে মনে করেন বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আ.লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যে কোনো সমস্যায় আমি নগরবাসীর পাশে থেকে সমাধানের চেষ্টা করেছি। করোনা সংকটে একটি দিনও ঘরে বসে থাকিনি। যখন যা প্রয়োজন ছিল সবকিছুই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করে চলেছি। নগরীর চেহারা অনেকাংশেই পাল্টে গেছে। তবে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, করোনা পরিস্থিতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের কারণে সেই অনুযায়ী সম্ভব হয়নি। তবে অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে নগরের মানুষ আমাকে আবারও সুযোগ দিবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন
মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু বলেন, জাতীয় নির্বাচন থেকেই ময়মনসিংহের রাজনীতিতে দুটি গ্রুপ প্রকাশ্যে এসেছে। সেটার প্রভাব সিটি নির্বাচনে অবশ্যই পড়বে। নৌকার জয়ে আমার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আমি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন আমি পুরোটাই পাব। সেক্ষেত্রে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম ফেরদৌস জিলু বলেন, প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকার কারণেই আমি প্রার্থী হয়েছি এবং আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কারণ নগরীতে নানান নাগরিক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করি। সেজন্য জনসম্পৃক্ততাও যথেষ্ট রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে আমি যেহেতু নৌকার পক্ষে কাজ করেছি সেজন্য নেতাকর্মীসহ জনগণ আমাকেই বেছে নিবেন বলে আমার প্রত্যাশা।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী অ্যাডভোকেট ফারামার্জ আল নূর রাজীবও। তিনি ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মেয়র প্রয়াত মাহমুদ আল নূর তারেকের ছেলে। রাজীব বলেন, বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যেই আমি প্রার্থী হব। আশা করছি, সাধারণ মানুষ আমাকেই বেছে নেবে। সংসদ নির্বাচনে যেহেতু আমার অবস্থান নৌকার পক্ষে ছিল, সেহেতু স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থন আমার পক্ষে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানান, জাতীয় নির্বাচন উৎসবমুখর করতেই জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে সর্বত্র কিছুটা বিভেদ লক্ষ্য করা গেছে। সেই বিভেদ নিরসনের জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনাও আসছে। আশা করছি, আসন্ন সিটি ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই তা নিরসন হবে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আহমেদ বলেন, আমাদের দলের বেশ কয়েকজন নেতা প্রার্থী হতে প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি।
আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, বিএনপি এই নির্বাচনে যাচ্ছে না এই সিদ্ধান্তই আমরা পেয়েছি।
উবায়দুল হক/পিএইচ